সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আট মাস গ্রামছাড়া ৪৫ পরিবার

৫২ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বন্ধ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হুমকিতে উল্লাপাড়া উপজেলার খাদুলী গ্রামের ৪৫টি পরিবার আট মাস ধরে গ্রামছাড়া। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রায় ৫২ ছেলে-মেয়ের। গ্রামে ফেরত যেতে পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্না দিলেও প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ এগিয়ে আসছেন না। বরং পুলিশের সহযোগিতায় খাদুলী গ্রামের প্রভাবশালী সৈয়দ আলী ও আবু সিদ্দিক গং হুমকি দিয়ে চলছে বলে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে ৪৫ পরিবারের পক্ষে নান্নু মিয়া বলেন, খাদুলী গ্রামের নান্নু গং মালিকানা ও কিছু সরকারি সম্পত্তি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করছিলেন। এরই মধ্যে ওই গ্রামের সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন দাগের জমি জাল দলিল করে দখল নেন। এ নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক হলে সাইফুল দোষী সাব্যস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। ২০১২ সালে সাইফুল মারা গেলে তার ছেলে সৈয়দ আলী, শহিদুল ইসলাম ও ভাই আবু সিদ্দিক নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ২০১৬ সালে ‘রাজাকার’ ওই পরিবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পরই গ্রামে ঢুকে প্রভাব খাটিয়ে ও পুলিশের সহযোগিতায় তাদের ৪৫ পরিবারকে গ্রামছাড়া করেন। বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে পুকুরের মাছসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। আইজিপি বরাবর আবেদন জানালে, তিনি জেলা পুলিশকে তদন্তের ভার দেন। শাহজাদপুর সার্কেলের এএসপি আবুল হাসনাত বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পান এবং চলতি বছরের ২১ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় ৪৫টি পরিবার বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন মারা গেলেও এলাকায় দাফন করতে পারছে না। দাফনের জন্যও চাঁদা দাবি করা হয়।

শাহজাদপুর সার্কেলের এএসপি আবুল হাসনাতের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, সাইফুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ও সচতুর ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জীবিত থাকাকালে সরকারি ও মালিকানা সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে ভুয়া দলিল করেছেন। তার ছেলেরা ২০০৯ সালে জীবিত পিতাকে মৃত দেখিয়ে ভুয়া দলিলে ওসমানের জমি বিক্রি করেছেন। সম্প্রতি তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করে নান্নু গংয়ের সব সম্পত্তি দখল করে।  এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, বিষয়টি শুধু পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমাধান সম্ভব নয়। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় হওয়ায় সিভিল প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া বিষয়টি সমাধানে দুই পক্ষকেই বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো পক্ষ আন্তরিক না হওয়ায় সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর