শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিলক্ষায় তাণ্ডব চলছেই

নরসিংদী প্রতিনিধি

নিলক্ষায় তাণ্ডব চলছেই

নরসিংদীর রায়পুরায় প্রতিপক্ষের দিকে টেঁটা নিক্ষেপ করছেন এক ব্যক্তি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল নিলক্ষায় গত ইউপি নির্বাচনোত্তর শুরু হওয়া হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট থেমে থেমে চলছেই। অতিসম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় প্রায় ৭০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঈদুল আজহার আগে রশিদ নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী দুষ্কৃতকারীরা একের পর এক এ তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ আমল থেকেই টেঁটাযুদ্ধসহ সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নটি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষার আধুনিকতার ছোঁয়ায় দাঙ্গা-ফ্যাসাদ অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে শুরু হয়েছে হাঙ্গামা-লুটতরাজ।

জানা যায়, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেতে পারেননি নিলক্ষাবাসী। নিজেদের জানমাল আর সম্পদ রক্ষার জন্যই দৌড়ে বেড়িয়েছেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রায় প্রতি বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে। অন্যথায় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।  পুলিশ বলছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ঝগড়া ঠেকানো মুশকিল। দুর্গম চরাঞ্চলে হাঁটাপথ ব্যবহার করে দুটি গ্রুপের স্বার্থ নিয়ে প্রতিহিংসার আগুন নির্মূল করা দূরূহ ব্যাপার। তবে বাস্তবতা হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা দূর থেকে এ হাঙ্গামার বীজ বুনছে। ফলে নিলক্ষা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা যাচ্ছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রভাবশালীদের পকেটে। রায়পুরা থানার ওসি আজাহারুল ইসলাম জানান, এলাকাটি দুর্গম চরাঞ্চল। তা ছাড়া থানা কম্পাউন্ড থেকে বহু দূরে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখানে থাকে না। বাইরে থেকে হঠাৎ এসে ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সরেজমিন নিলক্ষা ইউনিয়নের সরকার বাড়ি থেকে একটু সামনে এগোতেই দেখা গেল পোড়াবাড়ির দৃশ্য। ঘরগুলোর ভিতরে কিছুই নেই। পড়ে আছে শুধু পোড়া কাঠ, কয়লা আর ছাই। আগুন দেওয়ার আগে ইচ্ছা মতো লুটপাট চালিয়েছে দস্যুরা। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর হক সরকারের পাকা বাড়ি ভেঙে ফেলেছে হামলাকারীরা। এমন প্রায় ৭০টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুনে পোড়া বাড়িঘর দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মহিলারা আসছেন দল বেঁধে। ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে কথা বলতে রাজি হননি কেউ। এলাকার পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হলেও সেখানে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। শুধু নিলক্ষার প্রবেশমুখে একটি সেতুর কাছে তিনজন পুলিশ সদস্য বসা ছিল। এলাকা থেকে পালিয়ে অনেকেই এখন অবস্থান করছেন নরসিংদী শহরসহ আশপাশের এলাকায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নির্যাতিত এলাকাবাসী।

সর্বশেষ খবর