দুর্বৃত্তদের হামলায় ২ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ গোলাম হাছান খান সুজন (৫২) আহত হওয়ার ঘটনায় ৪ ফেব্রুয়ারি শহরের রঘুনাথ বাজার মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সভায় বক্তাদের কথাবার্তায় স্পষ্ট হয় যে, দুই গ্রুপের কলহ কোন্দল থামছেই না। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ও শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় সাবেক সহসভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামান বাদশা ছিলেন প্রধান বক্তা। বক্তারা অধ্যক্ষ সুজনের ওপর হামলার জন্য দায়ী। দুর্বৃত্তদের শাস্তির দাবি করলেও কেউ দায়ীদের সুস্পষ্ট নাম বলেননি। আকার ইঙ্গিতে দলের অপর গ্রুপকে দায়ী করা হয়েছে। কয়েকজন বক্তা বলেছেন, সদ্য শেষ হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই সুজনকে জখম করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। প্রধান বক্তা বাদশা শেরপুরের এ অবস্থার জন্য পাশের আসনের এমপি কৃষিমন্ত্রী মতিয়াকে দোষারোপ করে বলেছেন, মন্ত্রীর ইশারায় প্রশাসনকে ব্যবহার করে শেরপুরকে অশান্ত করতে চাওয়া হচ্ছে। তিনি জেলা প্রশাসক ডা. এ এম পারভেজ রহিমকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেন। হুইপ আতিক বক্তব্যে মতিয়া চৌধুরী তার এক সময়ের তার বিশ্বস্ত শিষ্য সাবেক মেয়র সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (দলের বিদ্রোহী) হুমায়ুন কবির রুমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুকে শেরপুরের সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, মতিয়ার জন্ম ঝালকাঠি, থাকেন ঢাকায়, কলকাঠি নাড়েন শেরপুরে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে মতিয়া রুমানের পক্ষে কাজ করার দরুণ দলীয় প্রার্থী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পাস করতে পারেনি। নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রার্থী ভোটই চাইতে পারেননি। এ ব্যাপারে সংসদকে জানানো হবে। গত মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনায় অংশ নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আতিউর রহমান আতিক বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রুমান পাস করার পর একটা অদৃশ্য শক্তির ইশারায় শেরপুরে সন্ত্রাস চলছে। প্রশাসনের নীরবতায় ও ছত্রছায়ায় শেরপুর সরকারি কলেজ, সেকান্দর আলী কলেজ, কামারের চর কলেজের অধ্যক্ষকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। জেলার সিভিল সার্জনকে অস্ত্র দেখানো হয়েছে, গাজীর খামারের চেয়ারম্যানকে প্রহার করা হয়েছে। সর্বশেষ অধ্যক্ষ সুজনকে মেরে ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে। গতকাল পৌনে দুই বছরের মাথায় জেলা প্রশাসক ডা. রহিম পারভেজকে বদলি করা হয়। অনেকেই বলছেন সরকারি দলের গ্রুপিংয়ে বলি হলেন এই জেলা প্রশাসক। অপর দিকে ৯ জানুয়ারি আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসভায় নানা অভিযোগ এনে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের অপর অংশের নেতারা। নেতারা বলেছেন, সেই ১৯৯৬ সালের দুঃখিনী মায়ের ছেলেটি অর্থ-বৃত্তে আজ কেমন হয়েছে তা শেরপুরের মানুষ সবাই অবগত। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে শহরের নয়আনি বাজার খরমপুর এলাকায় এক আলোচনা সভায় আতিকের বিরুদ্ধে সব বক্তাই ব্যাপক সমালোচনা করেন। বক্তরা বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আতিক কাউকে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই দেয়নি। কোনো নেতা বিরুদ্ধাচরণ করতে চাইলেই তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়ে শেরপুরে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন দলে সাদা চামড়ার মক্ষীরানীদের কদর সবচেয়ে বেশি। বর্তমান নেতাদের কর্মকাণ্ডে ভদ্র ঘরের মহিলাদের দল করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কয়েকজন নেতা। সভাটি ছাত্রলীগের হলেও একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের এক বিরাট জনসভায় রূপ নেয়।