মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দীর্ঘদিন বন্ধ অপারেশন থিয়েটার এক্স-রে মেশিন থেকেও নেই

বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপেক্স

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

‘হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। ওষুধ মেলে না। ভিতরে ঢোকা যায় না ময়লার গন্ধে। সেই সকালে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি কিন্তু হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নেই। টিকিট কেটে বসে আছি। আমার রোগীর কিছু হয়ে গেলে তার দায়িত্ব কে নেবে?’ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতাল গেটে কথাগুলো বলছিলেন পৌর সদরের ছোলনা গ্রামের কামরুল ইসলাম। এ সময় আরও কয়েকজন লোক জড়ো হয়। এদের মধ্যে একজন শিবপুর গ্রামের হাফিজ বলেন, ‘এ হাসপাতালে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না। জরুরি বিভাগেও টাকা লাগে।

হাসপাতালের এক কর্মী জানান, জরুরি বিভাগে কোনো লোক নেই। অন্য বিভাগের লোক দিয়ে কাজ চালানো হয়। যে তিনজন কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে নানা ছলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। একটু পরে হাসপাতালে ঢুকে দেখা যায়, ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে রোগীর লাইন। জানা গেল জরুরি বিভাগে শুধু ডা. মোহাম্মদ মারনুশ আছেন। হাসপাতালে খাবার পানিরও সমস্যা রয়েছে। একই অবস্থা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপেক্সের পাঁচটি সাব সেন্টার আর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে এ উপজেলার ৩ লাখ মানুষ।

জানা যায়, স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপেক্সটি ২০০৬ সালে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এখন কাজ চলছে একশ শয্যায় উন্নীত করার। হাসপাতাল সূত্র জানায়, এখানে ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১৪টি শূন্য। একজন আছেন ডেপুটেশনে। তৃতীয় শ্রেণির ৯৪ পদের মধ্যে ৫০ জন কর্মরত আছেন। প্রধান সহকারী, প্রধান সহকারী কাম একাউনটেন্ট, ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যানবিদসহ ৪৪টি পদ খালি। চতুর্থ শ্রেণির ২৪টি পদের ১৫টিই শূন্য। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন প্রসূতি মায়েরা। গাইনি ও অ্যানেসথিয়া সার্জন না থাকায় একটি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ২০০৫ সালে একটি আধুনিক এক্স-রে মেশিন পায় হাসপাতাল যা আজ অবধি কক্ষেই বন্দী হয়ে আছে। জরুরি বিভাগের কর্মচারী না থাকায় মালি, পিয়ন, ওটিবয় সেখানে কাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক ও জনবল খুবই কম। রোগীর চাপ বেশি। ৫০ শয্যার হাসাপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৮০-১০০ রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে গড়ে ৪০০ রোগী দেখা হয়’। টাকা নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান- বর্তমানে এমন অভিযোগ নেই। তারপরও তিনি দেখবেন। সকাল সাড়ে ১০টায়ও ডাক্তার না থাকার বিষয়ে বলেন- ‘এলাকার অনেকে প্রাইভেটভাবে দেখাতে চায়। তাই তাদের আসতে একটু বিলম্ব হতে পারে’।

সর্বশেষ খবর