শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

টাকায় দেব আদর, নইলে তার মাথায় ভাঙি পাথর

শেরপুর কারাগার

শেরপুর প্রতিনিধি

বন্দী বা তাদের স্বজনদের সঙ্গে শেরপুর কারাগারের রক্ষী ও কর্মকর্তাদের টাকা লেনদেন চলে- এটা এখন ওপেন সিক্রেট। অবস্থাটা এমন যে, অনেকে কবিতার ঢঙে বলেন, ‘টাকায় দেব আদর, নইলে তার মাথায় ভাঙি পাথর’। টাকা দিলে জেলখানায় বন্দীদের আদরযতœ বাড়ে, না দিলে চালানো হয় জুলুম। এ জেল থেকে সদ্যমুক্ত ব্যক্তিরা ও তাদের স্বজনরা এসব ভোগান্তির কাহিনি বর্ণনা করেছেন। সূত্র জানান, আসামি প্রথম জেলে পৌঁছার পর তল্লাশি চালিয়ে এবং নানারকম নিয়ম শুনিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। সোর্স দিয়ে বন্দীর আর্থিক অবস্থার খোঁজ নেওয়া হয়। এরপর যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো টাকা আদায়ের জন্য তাদের সঙ্গে বেশি বেশি নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। ওই বন্দীদের রাখা হয় ‘আমদানি’ ওয়ার্ডের টয়লেটের পাশে ‘ইলিশ’ ফাইলে (দুজনের স্থানে ১০ জন)। বন্দী তখন বাধ্য হয়ে টাকা দেন। সাড়ে ৯ হাজার টাকা দিলে বন্দীকে রাখা হয় ‘অবকাশ’ নামক সেলে। এরপর প্রতি মাসের ১ তারিখে দিতে হয় ৮০০ টাকা। অভিযোগ : সেলের এ টাকাটা দিতে হয় স্বয়ং জেলারের হাতে। আর খাওয়াদাওয়া, গোসল, রোদ লাগানো- সব ক্ষেত্রেই দিতে হয় টাকা। সাক্ষাতের জন্য ‘রেট’ নির্ধারণ করেছে দুর্নীতিপরায়ণরা। অফিসে স্বজন ও বন্দী দেখা করবে- দাও ১ হাজার ১০০ টাকা। জানালার এপাশ-ওপাশে দেখা করতে লাগছে ৬০০ টাকা। বন্দীকে সামান্য দেখা যাবে- দাও ৫০ টাকা। দেখা যাবে না, শুধু কথা শোনা যাবে- এজন্য দিতে হয় ৫ টাকা। এসব চলে একদরে। আবারও টাকা না দিলে ৫-১০ মিনিট পর ‘সময় শেষ’ বলে বন্দীকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সরেজমিন এই প্রতিবেদক জানতে চান, বন্দীর সঙ্গে দেখা করার জন্য কী করতে হবে? জবাবে দুজন কারারক্ষী এই রেটের তথ্য দেন। প্রতিদিন শতাধিক লোক টাকা দিয়ে দেখা করছে, এ টাকা কোথায় যায়? রক্ষীদ্বয়ের সোজা জবাব- আমরা সুযোগ দিচ্ছি টাকা নিচ্ছি। তাদের উল্টো প্রশ্ন- আপনার এসব জানার দরকার কী? বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে আসা জেলগেটে অপেক্ষমাণ অনেক নারী-পুরুষ ঘটনার সত্যতার কথা জানিয়েছেন। সাধারণের অভিযোগ, এ কারাগারটি এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ‘বিশেষ খাদ্যব্যবস্থা’র নামে বাণিজ্যে নেমেছেন জেলার। সরকারি আইন অনুযায়ী বন্দীর স্বজনরা জেল কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা দেন। ওই টাকা থেকে বন্দীরা একটু স্বাদু খাবার খেয়ে থাকেন। এ খাদ্যের দাম ইচ্ছামতো আদায় করা হচ্ছে। জানা গেছে, ১ কেজি গরুর মাংসের দাম নেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কেজি ভাতের দাম ১২৫ টাকা, মাছ ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি, ছোট একটি কক মুরগি ৮০০ টাকা (সব রান্না করা দাম)। শখ করে ইলিশ খেলে (২টি) গুনতে হয়েছে ৭ হাজার টাকা। তবে ঊর্ধ্বতনরা যেদিন জেল ভিজিট করেন বিশেষ খাদ্যের দোকানটি সেদিন বন্ধ রাখা হয়। আদালত থেকে জামিন পেলেও স্বস্তি মেলে না বন্দীদের। টাকা না দিলে গেট থেকে আরেক মামলায় পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পুলিশকে না জানানোর শর্তে আসামিদের কারও কারও কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ আছে।

সর্বশেষ খবর