শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতি কেজিতে লোকসান ৪ টাকা

উৎপাদন খরচ ১৭ বিক্রি ১৩ টাকা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রতি কেজিতে লোকসান ৪ টাকা

মাঠে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষি শ্রমিক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শরীয়তপুরে বোরো ধানের আবাদ ভাল হলেও কৃষকরা ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে বিক্রি করছে। এ বছর শরীয়তপুর জেলায় ১৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার কেজি (১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন) ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৭ টাকা। ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে পাচ্ছে ১৩ টাকা। প্রতি কেজিতে লোকসান চার টাকা। শরীয়তপুর থেকে চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগ ১ লাখ ৬৭ হাজার কেজি (১৬৭ মেট্রিক টন) ধান ক্রয় করার বরাদ্দ পেয়েছে। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। জেলায় উৎপাদনের এক-শতাংশ ধান সরকারিভাবে ক্রয় করা হচ্ছে। বাকি ৯৯ শতাংশ ধান কৃষককে স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হবে। শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ওই পরিমাণ জমিতে ধান উৎপাদন হবে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন। জেলা খাদ্য বিভাগ ১৬৭ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে আর ৩৫৫ মেট্রিক টন চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করবে। ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ২৬ টাকা। আর চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কন্ডা গ্রামের কৃষক বকসু মাদবর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তার প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে হালচাষ বাবদ ১,৫০০, চারা ৫০০, রোপণ করার শ্রমিক ১,৫০০, সার ৩,২০০ টাকা, নিড়ানি শ্রমিক ২,৪০০ টাকা, সেচ ২,৫০০ ও ধান কাটতে খরচ ২,০০০ টাকা। মোট খরচ হয়েছে ১৩,৬০০ টাকা। তিনি বিঘাপ্রতি ধান পেয়েছেন  ৮০০ কেজি। সে হিসাবে প্রতি কেজিতে বকসু মাদবরের খরচ হয়েছে ১৭ টাকা। বকসু মাদবর বলেন, বাজারে ৫২০ টাকা হতে ৫৫০ টাকা দামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ধানে চার টাকা লোকসান। এই জমি ভাড়া দিলেও বিঘা প্রতি বছরে ১০ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম। ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাপরাইল গ্রামের কৃষক মোকছেদ বেপারী বলেন, আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ২৮ জাতের বোরো ধান আবাদ করেছি। এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা  ঋণ নিয়ে জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছি। শরীয়তপুর সদর উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক সালাউদ্দিন  বলেন, উৎপাদনের এক-শতাংশ ধান খাদ্য বিভাগ কিনছে। তাও আবার ফড়িয়াদের কাছ থেকে। সরকারও আমাদের ধান কিনছে  না। আবার খোলা বাজারেও ধানের দাম কম। আমরা কৃষকরা কোথায় যাবো? অথচ খোলাবাজারে চালের দামও বেশি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খোন্দকার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য কৃষি বিভাগে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা তালিকা ও উৎপাদনের তথ্য দিলে খাদ্য বিভাগ ধান ক্রয়ের কার্যক্রম শুরু করবে। কৃষি বিভাগ থেকে তালিকা না পাওয়ায় এখনো ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিফাতুল হোসাইন বলেন, কৃষক যাতে সরাসরি ধান খাদ্য অধিদপ্তরে বিক্রি করতে পারে সে জন্য তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। শিগগিরই খাদ্য বিভাগের কাছে তালিকা হস্তান্তর করা হবে।

সর্বশেষ খবর