রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

এক হাত জায়গার দাম ৩ হাজার পুঁটি মাছের কেজি ১৬০০ টাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে চঞ্চল্যকর তথ্য

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

এক হাত জায়গার দাম তিন হাজার টাকা। কম্বলের জন্য দিতে হয় পাঁচ হাজার। গরুর মাংসের কেজি এক হাজার। মুরগির মাংস ৭০০। আর পুঁটি মাছের কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা। শিশুদের রাখা হয় খাবার না দিয়েই। কোনো আবাসিক হোটেল নয়, এমন অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের। উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এখানকার নানা অনিয়মের চিত্র। ইতিমধ্যে জড়িত ২৬ কারারক্ষীকে বদলি করা হয়েছে। বরখাস্ত হয়েছেন সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবদুল ওয়াহেদ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে কারা অনুবিভাগের যুগ্মসচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়। এই কমিটি গত ৬ এপ্রিল প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্তে বন্দি বেচা-কেনা, সাক্ষাৎ, সিট, খাবার, চিকিৎসা এবং জামিনবাণিজ্যের প্রমাণ মেলে। এ সব থেকে আসা অর্থ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রক্ষীদের বিরুদ্ধে ভাগভাগির অভিযোগের সত্যতা পায় কমিটি।

প্রতিবেদনসূত্রে জানা যায়, কারাগারে প্রথম বন্দিদের যেখানে রাখা হয় তাকে আমদানি কক্ষ বলে। পরে বন্দিদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিক্রি করা হয়। ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসার নামে পাঠানো হয় হাসপাতালে। চিকিৎসার জন্য বন্দিপ্রতি মাসে দিতে হয় ১০-২০ হাজার টাকা। ওয়ার্ডে থাকতে লাগে মাসে ৫-৬ হাজার। বন্দী অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে চলে নির্যাতন। আটকিয়ে রাখা হয় বাথরুমে। প্রতি ওয়ার্ডে এক হাত পরিমাণ জায়গার জন্য দিতে হয় ৩ হাজার টাকা। মোটা ও অতিরিক্ত কম্বলের জন্য আদায় করা হয় ৫ হাজার। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন ছোট গ্লাসে একবার করে পানি মেশানো নি¤œমানের দুধ দেওয়া হয় শিশুদের। সারাদিন আর খাবার দেওয়া হয় না।

কারাগারের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে দুটি ক্যান্টিন। ভেতরের ক্যান্টিনের পরিবেশ বেশি নাজুক। ক্যান্টিনে ৩০ টাকার মিনারেল ওয়াটার বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। ১৪ টাকার আকিজ বিড়ির প্যাকেট ৩০, কাঁচামরিচ ৫০ টাকার বদলে ৪০০ টাকা কেজি, পুঁটি মাছ এক কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা। মাসিক ১০-২০ হাজার টাকায় আর্থিকভাবে সচ্ছল/প্রভাবশালী বন্দিরা হাসপাতালটি বাসাবাড়িতে পরিণত করেছে। কোর্টে হাজিরা শেষে ফেরার সময় মালামালের জন্য কারা ফটকে টাকা দিতে হয়। অফিস কলের মাধ্যমে সাক্ষাতের সময় অফিসে অবস্থানের জন্য স্বজনকে বন্দিপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হয়। কারা অভ্যন্তরের জানালা দিয়ে কথা বলার জন্য লাগে ১০০ টাকা। এই প্রতিবেদন দাখিলের পর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক বজলুর রশিদ গত ৫ মে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠান। যাতে ২৬ কারারক্ষীর নামের তালিকা দিয়ে তাদের বদলিপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের জেলার এজি মাহমুদ ২৬ কারারক্ষীর বদলির কথা স্বীকার করে জানান, তদন্তের পর আইজি প্রিজনের নির্দেশে তাদের বদলি করা হয়েছে। একজন বরখাস্ত হয়েছেন। জেল সুপারের বদলিরও প্রস্তাব করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর