শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

আশুগঞ্জে ক্ষতিপূরণ বাণিজ্য জমজমাট

কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প ঘিরে দালালচক্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য পাওয়ার জন্য প্রাপ্য টাকার শতকরা ছয় ভাগ অগ্রিম দিতে হবে। এই নিয়মটি চালু করেছে প্রকল্প ঘিরে গড়ে ওঠা শক্তিশালী দালালচক্র। সরকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা দেবে ছয় শতাংশ হিসেবে সে অঙ্ক ৩৮ কোটি টাকা। এই টাকা সংগ্রহ করে দালালচক্র পৌঁছে দিচ্ছে ‘দরকারি’ সব জায়গায়। আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণে চর-চারতলা মৌজার মহরমপাড়া এলাকার ২৫ একর ৬০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমি, অবকাঠামো, গাছপালা ও ব্যবসায়িক ক্ষতিপূরণ ইত্যাদির মোট মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৬২৬ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা যায়, মোট বরাদ্দে অধিগ্রহণকৃত ২৫ একর ২৬ শতাংশ জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৭ টাকা। বাজার মূল্যের তিনগুণ (২০০ শতাংশ) বেশি ক্ষতিপূরণে এই জমির দাম দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ২৩৪ টাকা। তেমনি অবকাঠামো ও গাছপালার মূল্য ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৪ টাকার একই হারে বৃদ্ধিতে (২০০ শতাংশ) হয়েছে ৩০ কোটি ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৬২৮ টাকা। এছাড়া ২ শতাংশ আনুষঙ্গিক খরচ খাতে ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অধিগ্রহণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৫৬৯ জন পাবেন এই টাকা। বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের চেক জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২৪ জুন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান অধিগ্রহণকৃত জমি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ জনের মধ্যে ৩৫ কোটি টাকার চেক বিতরন করেণ। তবে টাকা পেতে টাকা দিতে হচ্ছে এমন অভিযোগও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তকে তার নামে যত টাকার চেক হয়েছে এর ছয় পার্সেন্ট আগাম দিয়ে দিতে হচ্ছে। দালাল ধরেই টাকার চেক আনতে হয় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে রয়েছে দালালদের গভীর সখ্য। এরই মধ্যে আশুগঞ্জ পশ্চিম বাজারের মধ্যগলির একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘বিকল্প ভূমি অধিগ্রহণ অফিস’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা সেখানে আলাপ-আলোচনা করে দালালদের সঙ্গে রফায় উপনীত হন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, যে জমির শতক দুই-আড়াই লাখ টাকা বিক্রিও কঠিন ছিল, অধিগ্রহণ করায় এখন তার শতকের মূল্য ২৪ লাখ টাকা। এক ব্যবসায়ী জানান, তার এক আত্মীয় জানিয়েছেন ক্ষতিপূরণের যে টাকা তিনি পাবেন তার জন্য তাকে দিতে হবে ২ কোটি টাকা। এদিকে জমি নিয়ে জটিলতা বা আদালতে মামলা-মোকদ্দমা রেখেই ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাজিনা সারোয়ার বলেন, ছয় শতাংশ টাকা নেওয়া হচ্ছে এমন তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে এটুকু বলতে পারি এর সঙ্গে অফিসার লেভেলের কেউ জড়িত নন।

সর্বশেষ খবর