শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে মাছ চাষ

হুমকিতে আবাদি জমি ও বাড়িঘর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সেতু-কালভার্ট ও স্লুইস গেটর নিচের প্রবহমান পানি বন্ধ করে মাছ চাষের অভিযোগ ওঠেছে। ফলে ওইসব এলাকায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতায় আবাদি জমি ও বাড়িঘর হুমকিতে পড়েছে। দুর্ভোগের চিত্র তুলে পানি পুনরায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম। অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, দেউলিয়া, সগুনা গ্রামের মধ্য দিয়ে গোপালপুর হয়ে একটি খাঁড়ি (ক্যানেল) ফকিরনী নদীতে গিয়ে মিলেছে। বর্ষা মৌসুমে খাঁড়ি দিয়ে পানি নামলেও শুষ্ক মৌসুমে এই নিচু জমিতে ফসল ফলে। এছাড়া যুগ যুগ ধরে গণিপুর ইউনিয়নের পুড়াকয়া, মাধাইমুড়ি, আক্কেলপুর বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, গোপালপুরসহ পাশের ইউনিয়ন নিয়ে ১৫ থেকে ১৬টি গ্রামের নিচু এলাকার পানি নামার এই খাঁড়িতে পানি প্রবাহিত হয়। পানি নিষ্কাশনের কোনো বিকল্প পথ না থাকায় বর্ষাকালে এলাকার পানি নদীতে যাওয়ার এটি একটি মাত্র পথ। সম্প্রতি প্রভাবশালীরা সগুনা গ্রামের কাছে রাস্তার ওপর কালভার্ট, পোড়াকোয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাস্তার ওপর সেতু, বালানগর রাস্তার ওপরের সেতু-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ শুরু করে। ফলে ওইসব স্থান দিয়ে পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। অভিযোগকারী সগুনা গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী জানান, গত আষাঢ় মাস অধিক বৃষ্টিতে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর ভরে যায়। টানা বর্ষণে নদ-নদী, খাল-বিল পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনায় বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিচ, শাক-সবজির খেত তলিয়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাসুপাড়া ইউনিয়নের মোহম্মদপুর গ্রামের আবু সাঈদ, আব্দুল কুদ্দুস, হাতেম আলী, সাহেব আলী ও সগুনা গ্রামের আব্দুল করিম, নূর মোহাম্মদ মোজ্জাফর হোসেনসহ অর্ধশত কৃষক জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাঁড়িতে অন্তত ১৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে করে পানি প্রবাহের জায়গা বন্ধ হয়ে আশপাশের জমিতে গত বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন তারা। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পানি নামতে না পেরে তার জমির ধান, পানবরজ, সবজি খেত গত বর্ষা মৌসুমে ডুবে গেছে। এতে গত বছর এলাকার ৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মোহম্মদপুর, সগুনা, দ্বীপনগর, মাধাইমুড়ি, বালানগরসহ উপজেলার শত শত বিঘা জমি পড়ে থাকছে। সগুনা গ্রামের কৃষক শিহাব উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, রমজান আলী, বাবুসহ শতাধিক কৃষক জানান, স্থানীয় সাইপাড়া গ্রামের পুকুর ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান, দেউলা গ্রামের আমজাদ হোসেন, রহিদুল ইসলাম, ভবানীগঞ্জ এলাকার আজাহার আলী, নন্দনপুর গ্রামের বাবুল, সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারসহ ৭ থেকে ৮ জন পুকুরের ব্যবসার নামে পানি প্রবাহিত খাঁড়িতে বাঁধ দিয়ে পুকুর সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে। মাছ চাষের নামে মাথাভাঙ্গা কালভার্ট, গোপালপুর-দেউলিয়া সড়কের স্লুইস গেট, বালানগরের বিলের কালভার্ট, মোহম্মদপুর সগুনা এলাকার ৬ সেতু বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অবৈধভভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খননের অভিযোগে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। বিলের মুখে কালভার্ট-সেতু বন্ধ করে মাছ চাষের অভিযোগে নরদাশ, গোবিন্দপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান করে সেতুর মুখ খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অবৈধ পুকুর খনন সম্পন্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর