শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

চারদিকে বন্যার ক্ষত

প্রতিদিন ডেস্ক

চারদিকে বন্যার ক্ষত

জামালপুর (উপরে) ও নেত্রকোনায় বন্যায় ভেঙে যাওয়া সড়ক

দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বেড়িয়ে আসছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বানের পানিতে তলিয়ে এবং তীব্র স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। বন্যাপরবর্তী ভাঙনে বিলীন হয়েছে বহু বসতি, ফসলি জমি। সব বিলিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার চারদিকে চোখ পড়ে ক্ষতচিহ্ন। বানভাসীরা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা ও নীলফামারী থেকে পাঠানো প্রতিনিধিদের খবর- জামালপুর : সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুরে রাস্তা-ঘাট। পানির তীব্র স্রোতে মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর সড়কের ড্রাইভেশনটি বিলীন হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের অন্তত চার লাখ মানুষ। ইট-সুড়কি ফেলে তৈরি করা বিকল্প পথে কোনো মতে যাতায়াত করছেন এ এলাকার মানুষ। জামালপুর এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক জানান, মেলান্দহ-মাহমুদপুর সড়কের ড্রাইভেশনটি প্রতিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার সেটি পুরোপুটি নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে ড্রাইভেশনের পরিবর্তে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : গত তিন সপ্তাহের বন্যা-ভাঙনে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ফসলহানি হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। পঞ্চাশ হাজারের বেশি বসতভিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার দশ হাজারের বেশি তাঁত কারখানা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন মালিক-শ্রমিকরা। কৃষি নির্ভরশীল মানুষরা ফসল হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। আর ভাঙনে সর্বস্বহারা পরিবারগুলোর ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাওয়া মাঠে চলছে পাঠদান। চৌহালী ও এনায়েতপুর পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদীতীরের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও পরিবারের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। নেত্রকোনা : ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কটির এমনিতেই বেহাল অবস্থা। এরই মধ্যে সম্প্রতিক বন্যায় সড়কটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানা-খন্দ। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে মানুষ। আসন্ন ঈদে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীরা জানান, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় চলাচলের এটিই একমাত্র সড়ক। কয়েক বছর ধরে বেহাল সড়কটি। বন্যার আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। চলাচলের জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। নীলফামারী : ঘরে ফিরলেও বানের পানির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি নীলফামারীর ১১টি ইউনিয়নের মানুষ। তিস্তা নদীবেষ্টিত এসব এলাকার দশ হাজারেরও বেশি মানুষ এবারে আক্রান্ত হন বন্যায়। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘর ছেড়ে প্রায় দশ দিন ধরে উঁচু স্থানে বসবার করেছেন এখানকার শত শত মানুষ। জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, তিস্তা নদীবেষ্টিত কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য আমরা বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। এবারও ত্রাণ থেকে শুরু করে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর