রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএস কোয়ার্টারগুলো অপরাধীদের আখড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

বিএস কোয়ার্টারগুলো অপরাধীদের আখড়া

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (বিএস) কোয়ার্টারগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রং চটে গেছে, ময়লায় ভরে গেছে। আগাছা জমেছে। খোলা থাকায় কুকুর-বিড়াল ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করে। অভিযোগ উঠেছে, রাতের আঁধারে সেখানে এখন মাদকসেবী আর জুয়াড়িদের আড্ডা বসে। এসব বিএস কোয়ার্টারকে ঘিরে রাতে চুরি আর ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সোনাতলায় স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ৫টি ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কৃষকদের কৃষি সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইউনিয়নে ইউনিয়নে নির্মাণ করে বিএস (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য) কোয়ার্টার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি বিভাগে নিয়োজিত বিএসগণ ওই কোয়ার্টারগুলোতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে ওই কোয়ার্টারগুলো কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ব্যবহার না করায় বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ওই কোয়ার্টারগুলোতে লোকজন বসবাস না করার সুবাদে সন্ধ্যার পর নেশাখোর আর জুয়াড়িদের আস্তানায় পরিণত হয়। এমনকি কিছু কিছু বিএস কোয়ার্টারে বখাটে যুবকদের আনাগোনায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে চুরি, ছিনতাই ঘটনা বেড়েই চলেছে। খোলামেলা থাকায় কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীও বাসা বেঁধেছে। এর সঙ্গে সুযোগ পেলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিরা অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জন্য সোনাতলা উপজেলায় নির্মিত বিএস কোয়ার্টার দেখতে গিয়ে নানা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার বিএস কোয়ার্টারটি জোড়গাছা ইউনিয়নে ভেলুরপাড়া চারমাথা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এনায়েত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে। প্রায় ৩ একর জায়গার ওপর ৪টি কোয়ার্টার অবস্থিত। কোয়ার্টার সংলগ্ন একটি বিশাল পুুুকুর রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন লোক ভ্যানযোগে ওই সরকারি পুকুর থেকে মাটি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। অপরদিকে বালুয়াহাট এলাকায় বিএস কোয়ার্টার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই কোয়ার্টারের আশপাশে নেশাখোর ও জুয়াড়িদের আনা-গোনা।

এ ছাড়াও পাকুল্যা এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বিএস কোয়ার্টারে দিনে বসে নেশাখোর ও জুয়াড়িরা পরিকল্পনা করে আর রাতে তারা ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি কাজে লিপ্ত হয়। পাকুল্যা বাজার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরেই যমুনা নদীর চর। নেশাখোররা নেশার অর্থ সংগ্রহ করতে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালায় রাতে। এ ছাড়াও উপজেলার তেকানী চুকাইনগর কাচারিবাজার এলাকায় গিয়ে বিএস কোয়ার্টারগুলোর ভিতর এবং চত্বরে দফায় দফায় জুয়াড়িরা বসে জুয়ার আসর চালাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, এক সময় কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসগণ পরিবার পরিজন নিয়ে ওই কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করে কৃষকের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতেন। আজ তারা উপজেলা সদর থেকে এসে কৃষকের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ আহম্মেদ জানান, ওই বিএস কোয়ার্টারগুলো বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় কেউ বসবাস করতে চায় না। পাশাপাশি অত্যাধুনিক যুগে সবাই গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হয়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য বেশির ভাগ কর্মকর্তা শহরে থাকেন। তাই কেউ ওই কোয়ার্টারগুলোতে বসবাস করতে আগ্রহী নন। তাছাড়া মেরামত বা সংস্কার না করার ফলে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বিএস কোয়ার্টার রয়েছে। কোয়ার্টারগুলো সংস্কার না করার ফলে এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আছে।

সর্বশেষ খবর