রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা মন্টু চন্দ্র (৮২)। জীবিকার তাগিদে শেষ বয়সে এসেও বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন ব্যবহার্য জিনিষপত্র। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চালান। গ্রামে আগের মতো বাঁশ পাওয়া যায়না। অন্য গ্রাম থেকে কিনে আনতে হয়। এতে খরচ যেমন বেশি পড়ে অন্যদিকে বাঁশের তৈরি জিনিষপত্রাও মানুষ তেমন কিনতে চায় না। মন্টু বলেন, ‘এটি পূর্বপুরুষের পেশা। বাঁশ দিয়ে তৈরি দৃষ্টি নন্দন ব্যবহার্য পণ্য তৈরি করতে পারলে যেমন সংসারে আয় বাড়তো অন্যদিকে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। এ ক্ষেত্রে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। ব্যাংকগুলো আমাদের সহজে ঋণ দিতে চায় না। আমাদের গ্রামের ৩৫ পরিবার সবাই এ কাজ জানে। বর্তমানে তারা এ কাজ করে কোনরকম বেঁচে আছে।’ তিনি জানান, আমার তিন ছেলে। সবাই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে গেছে জীবিকার সন্ধানে। আমি বৃদ্ধ মানুষ। কষ্ট করে হলেও বাপ-দাদার পেশা ধরে আছি।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা দোল কিনি বালা (৬৭) জানান, সারাদিন পরিশ্রম করে জিনিষপত্র তৈরির পর বাজারে পাঠালে ২০০-২৫০ টাকা আসে। এ দিয়ে কি সংসার চলে? অন্য কোনো কাজও জানিনা। একই এলাকার দেবেন্দ্র নাথ বলেন,‘ আধুনিক এই যুগে প্লাটিকের সহজলভ্যতা ও দাম কম হওয়ায় বাঁশের তৈরি পণ্যে আর মানুষের আগ্রহ নেই। আমরা পরিবার নিয়ে কেমন করে বাঁচবো।’ স্থানীয় গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজার রহমান জানান, পাঠনিপাড়া ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের মানুষ বাঁশের তৈরি বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাঝে মাঝে তাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয় তবে তা যথেষ্ট নয়। বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট জানান, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এদের সহজ শর্তে ঋণ দিলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনসহ শিল্পটি বেঁচে যেতো। দেশিয় এই শিল্পকে আমাদের প্রয়োজনেই রক্ষা করা উচিত।