মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ব্রহ্মচারীর আত্মহত্যা

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুরে মহানাম সম্প্রদায়ের প্রধান কেন্দ্র শ্রীঅঙ্গনের ভিতরে গলায় ফাঁস নিয়ে বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী নামের এক সেবায়েত আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল সকালে শ্রীঅঙ্গনের ভিতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, শহরের গোয়ালচামটে অবস্থিত শ্রীঅঙ্গনের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সেবায়েত ও পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্ব চলছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রীঅঙ্গনের ভিতরে থাকা কয়েকজন সেবায়েত জানান, শ্রীঅঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করতে একটি মহল পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাদের লোভের কাছে আজ জিম্মি শ্রীঅঙ্গন। ফলে সেবায়েতদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীকে নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছিল তা পরিকল্পিত। তাকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছিল। দুই নারীকে দিয়ে মিথ্যা অপবাদ এবং বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করায় অনেকের কাছে সেবক বন্ধু বলেছিলেন, কলঙ্কের বোঝা মাথায় নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুই তার কাছে বেশি ভালো।

রবিবার রাত ৮টা ৪ মিনিটে বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেন- ‘জীবনের শেষ লেখা-শেষ কথা। এভাবে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল না। পরিস্থিতির কারণে যেতে হচ্ছে। কলঙ্ককে মৃত্যুর সমান মনে করি। এর জন্য দায়ী শ্রীঅঙ্গনের মহানাম সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু ব্রহ্মচারী।

তারই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। দুই নারীকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করেছে। অনুরোধ করব- দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলুন। জেগে উঠুন। বহুমুখী গণতন্ত্রের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তুলুন। মহানাম সম্প্রদায়ে সাধুর অভাব নেই। আছে শুধু মনের অভাব। সবাইকে ডেকে ঐক্য গড়ে তুলুন। আমার আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে শ্রীঅঙ্গনের ও সম্প্রদায়ের মধ্যকার আসুরিক শক্তির বিনাশ ঘটুক। শুভবুদ্ধির উদয় হোক-জাগরণ ঘটুক। এই কামনা করি। প্রভুর নাম স্মরণ করতে করতে ফাঁসির দড়ি গ্রহণ করব এবং নাম করতে করতে চলে যাব। পাপ পুণ্য আমাকে স্পর্শ করবে না আমার বিশ্বাস-জয় হরি, -বন্ধু সেবক।’

কোতোয়ালি থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন জানান, রবিবার রাতে ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেওয়ার পর যে কোনো সময় সে আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা। খবর পেয়ে সোমবার সকালে পুলিশ শ্রীঅঙ্গনের একটি ভবনের ৫ম তলার নিজ কক্ষ থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশটি উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধার করে মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পরই মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নানা দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ এবং শ্রীঅঙ্গনের সেবায়েতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে শ্রীঅঙ্গনে সাবেক সাধারণ সম্পাদক বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীর সঙ্গে শ্রীঅঙ্গনে কর্মরত দুই মেয়েকে জড়িয়ে আপত্তিকর কথা বলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু ব্রহ্মচারী। এ নিয়ে শ্রীঅঙ্গনের ভিতরে থাকা সেবায়েত সাধুদের মধ্যে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনাটি শ্রীঅঙ্গনের ভিতরের গি  ছাপিয়ে শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্রীঅঙ্গনের ভিতরে একটি শালিস বৈঠক হয়। সেখানে সাবেক সাধারণ সম্পাদক বন্ধু সেবক ব্রহ্মচারীকে অভিযুক্ত করা হয় এবং শ্রীঅঙ্গন ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। এসব কারণেই হয়তো তিনি অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। আত্মহত্যার আগে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজ্ঞান বন্ধু ব্রহ্মচারীকে দায়ী করে ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যে দুই নারীর অভিযোগ নিয়ে সেবক বন্ধুকে অপবাদ দেওয়া হয়েছে সেই নারীদের একজনের ছেলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আমার মাকে অভিযোগ দিতে বলেন এবং বিচারের জন্য সবার কাছে যেতে বলেন। শ্রীঅঙ্গনের আশপাশে বসবাসকারীরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিজ্ঞান বন্ধুকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

বিজ্ঞান বন্ধু ব্রহ্মচারী জানান, ফেসবুকে আমাকে দায়ী করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তিনি কেন আমাকে দায়ী করে গেলেন তা জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, সেবক বন্ধু ভালো লোক ছিল না। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। আপনাকে দায়ী করা হচ্ছে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞান বন্ধু বলেন, আমাকে ফাঁসাতেই হয়তো এমনটি করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর