রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভালো নেই তাঁতশিল্পীরা

আব্দুল লতিফ লিটু, ঠাকুরগাঁও

ভালো নেই তাঁতশিল্পীরা

ঠাকুরগাঁও সদরের কিসমত কেশুরবাড়ি গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায় তাঁতের খটখট শব্দ। বিভিন্ন বাড়িতে দেখা যায়, আঙিনায় কারিগর নিপুণ হাতে বুনে চলেছেন কম্বল। এই তাঁতশিল্প এখানকার মানুষকে আর্থিক সচ্ছলতা দিয়েছিল। এখন সেই দিন অতীত।

পুঁজির অভাবে তাঁতিরা এ ব্যবসায় আগের মতো আর বিনিয়োগ করতে পারছেন না। বেশির ভাগ তাঁতিই পুঁজি জোগাতে মহাজন ও দাদন ব্যবসায়ীর সুদের জালে জড়িয়ে পড়েছেন। সুদ পরিশোধেই চলে যাচ্ছে তাদের পুঁজির বড় অংশ। তাঁতিরা জানান, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এখানে শুরু হয় তাঁতযন্ত্রের মাধ্যমে কম্বল তৈরির কাজ। গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। অধিকাংশই কম্বল বুননের কাজে জড়িত। তারা বলসুতা, পুরনো সোয়েটারের উল দিয়ে কম্বল, গায়ের চাদর, মাফলারসহ অনেক কিছু তৈরি করেন। কম্বল কিনতে ইতিমধ্যে গ্রামটিতে ভিড় জমাচ্ছেন পাইকাররা। তবে পুঁজির অভাবে এবার চাহিদা মতো কম্বল তৈরি করতে পারছেন না বলে জানান কারিগররা। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এখানকার পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় ১২০০ মানুষ বংশানুক্রমে এখনো তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা আগে শাড়ি-লুঙ্গি তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু কম্বল বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই দুই থেকে ছয়টি তাঁতকল রয়েছে। কারিগর ধনেশ দুঃখ নিয়ে বলেন, ‘শীত আসলে আমরা এই কম্বল তৈরি করে সংসারের খরচ চালাই। গরমের সময় কম্বল তৈরির কাজ থাকে না। তখন শহরে গিয়ে রিকশা চালাতে হয় বা ইট ভাটায় কাজ করতে হয়। কম্বল বিক্রির টাকায় কিছুদিন ভালোভাবে চলা যায় তারপর আবার কষ্ট শুরু। সরকার কোনো সহযোগিতা দিলে সারা বছর আমরা তাঁতের কাজ করতে পারতাম।’ আরেক কারিগর সুরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘সুতার দাম এলা অনেক বেশি, কম্বলও বেশি বিক্রি হয় না। এলা মেশিনের কম্বল অনেক কম দাম দিয়া পাওয়া যাছে তাই হামার কম্বল কেহ নিবা চাহে না।’

 এই কম্বল বিক্রির টাকায় কোনোমতে সংসার চলে।’ কম্বল কিনতে আসা পাইকাররা বলেন, স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে পুরনো এই শিল্পকে বাঁচানো যাবে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, ‘এখন তাঁতিদের অর্থনৈতিক সহযোগিতা দরকার। তাদের সহায়তার জন্য ইতিমধ্যে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর