শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ধান চাষে আগ্রহ কমছে দক্ষিণাঞ্চলে

লোকসানের কারণে সবজি ও মাছ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ধান চাষে আগ্রহ কমছে দক্ষিণাঞ্চলে

উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে ধান চাষে আগ্রহ কমেছে। এছাড়া আমনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণের পর এবার বোরো বীজতলাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীতের কারণে ধানের চারায় গোড়া বা পাতা পচা রোগে ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

জানা যায়, অব্যাহত লোকসানের কারণে এ বছর খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা ও রূপসা এলাকার অনেক কৃষক ধানের বদলে সবজি ও মাছ চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনায় ৫৯ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। তবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার ৯১৫ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৯৮৫ হেক্টর বেশি। তবে ধান চাষে কৃষকের আগ্রহ কমতে থাকায় এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। ডুমুরিয়ার খর্নিয়া ডোংরার বিলের কৃষক আশুতোষ কুমার বলেন, ‘ধানে আর কত লস দেবো। প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ সেই ধান হাট-বাজারে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। প্রতি মণ ধানে লোকসান গুণতে হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এ কারণে ধানের বদলে এবার মাছ চাষ শুরু করেছি।’ একই ভাবে খর্নিয়ার দক্ষিণ বিল ও সিংগার বিলের অনেক কৃষক ধানে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় লোকসানের মুখে মাছ ও শাকসবজি আবাদ শুরু করেছেন। বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক রামকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ধান বিক্রি করতে গেলে, ধানের দাম নেই। কিন্তু বীজ কিনতে গেলে দাম আকাশ ছোঁয়া। তারপর ঘন কুয়াশা-শীতে বোরো বীজতলাও হুমকির মুখে রয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এদিকে ধানে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং, ফয়িড়া-মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ ও সরকারি পর্যায়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে ধান ক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণে কয়েকটি বিলের আমন ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকরা বোরো আবাদে ঝুঁকছেন। বড় ধরনের বিপর্যয় না হলে এবারও বোরোর বাম্পার ফলন হবে। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার সময় বীজতলা সাদা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এছাড়া সকালে দড়ি টেনে দিয়ে বীজতলার চারায় জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে বীজতলায় সার প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘বুলবুল’ এর আঘাতে খুলনা জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া রূপসার জাবুসা বিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় কারেন্ট পোকার আক্রমণেও আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সর্বশেষ খবর