শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ সম্পাদকের মামলায় চাঞ্চল্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ সম্পাদক আল মামুন সরকার বাদী হয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আমানুল হক সেন্টুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮-এর ২৯(১)(২)৩১(১)(২) ধারায় মামলা করায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সদর মডেল থানার মামলা নম্বর ৫৮। বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলা হওয়ার পরই ৩০/৩৫ জন পুলিশ আমানুল হক সেন্টুর শহরের ফুলবাড়িয়ার বাসভবনে অভিযান চালায়। তিনি বাসায় ছিলেন না। মামলার ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে। এ ছাড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম ভূইয়া, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু হুরায়রা, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শোভনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর আগে ১৪ জানুয়ারি আল মামুন সরকার শফিকুল আলমকে ১ নম্বর ও আমানুল হক সেন্টুকে ২ নম্বর আসামি করে থানায় এজাহার জমা দেন। এজাহারে আল মামুন সরকার নিজেকে মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা কমান্ডার ও পাকিস্তানি হানাদার-সৈন্য ও তাদের দোসরদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে একাধিকবার আহত বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিবাদীরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনার নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর সুনাম ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। লিগ্যাল নোটিস দিয়ে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়। এদিকে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ভ-ুল করার মামলায় পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে রিফাদ হোসাইন ফারহান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে। এর আগে এ মামলাটি নিয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা ছিল না।

মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও হামলার পরই আল মামুন সরকারকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন শফিকুল আলম ও আমানুল হক সেন্টু। পরদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মামুন ওই ঘটনায় তাকে জড়িত করার প্রতিবাদ জানান। সে সময় তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলমকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও আমানুল হক সেন্টুকে নামধারী মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিহিত করেন। সেন্টুর দুই ভাই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন মামুন। এরপর ২৩ ডিসেম্বর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এ বক্তব্য দেন। এরপর ২৬ ডিসেম্বর আমানুল হক সেন্টু ও শফিকুল আলমকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের পক্ষে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। এরপর ১২ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট শওকত আলীর মাধ্যমে এ লিগ্যাল নোটিসের জবাব দেন আমানুল হক সেন্টু ও শফিকুল আলম। এতে আল মামুন সরকারের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ১৯৫৮ সালের ১ মার্চ। স্বীকৃতমতেই মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মামুন সরকারের বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। তিনি কোন যুদ্ধে আহত হয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন তারও কোনো তথ্য নেই। আল মামুন সরকার স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে মরহুম হুমায়ুন কবিরের নির্বাচনী প্রচারণায় মোটরসাইকেলের চেইনে লেগে পায়ে ব্যথা পান। মামুন সরকারের শ্বশুর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ফরিদ মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একজন প্রখ্যাত রাজাকার ছিলেন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন বলে সেন্টু তার নোটিসের জবাবে উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ খবর