বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন

বিশেষ শিশুদের স্বপ্ন সারথি

মো. কামাল হোসেন

কক্সবাজার প্রতিনিধি

বিশেষ শিশুদের স্বপ্ন সারথি

আট বছরের শিশু তাসনিম। কথা বলতে পারে না এখনো। নাম ধরে ডাকলে তাকিয়ে থাকে অন্যদিকে। তাসনিম এখন মায়ের হাত ধরে ‘অরুণোদয়’ স্কুলে আসে প্রতিদিন। কয়েক মাসে বিশেষ এ স্কুলে আসায় সে কিছুটা অনুভূতিপ্রবণ হয়েছে। এখন দু-একটা কথা বলতে পারে। নাম ধরে ডাকলে কখনো কখনো তাকায়। তাসনিমের মতো চার বছরের আসমা, উজাইফা, ১২-১৩ বছরের সুদীপ্ত দে, সুদীপ্ত পাল এখন নিয়মিত এ বিশেষ স্কুলে আসে। তাদের বাবা-মায়ের আশা তার সন্তানও অন্য স্বাভাবিক সন্তানদের মতো হাসবে-কাঁদবে, কথা বলবে, জানাবে নানা আবদার। ‘অরুণোদয়’ ঘিরে তারা দেখছেন নতুন স্বপ্ন।

২০১৮ সালের ৪ মার্চ কক্সবাজারে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন কামাল হোসেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কক্সবাজারে এসেই শুরু করেন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একটি ঠিকানা গড়ার কাজ। শহরের সার্কিট হাউসের পাশে ‘অরুণোদয়’ স্কুলের জন্য ৭০ শতাংশ খাসজমির ওপর নির্মাণ করা হয় দোতলা একটি ভবন। জেলা প্রশাসকের বাংলো থেকে অফিসে যাওয়া-আসার পথেই পড়ে ‘অরুণোদয়’। তিনি প্রতিদিন কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্কুলে আসেন। জেলা প্রশাসক স্কুলে এলেই তার পিছু নেয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। কেউ কাঁধে, কেউ কোলে উঠে বসে। ‘অরুণোদয়’ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিশুদের জন্য গড়ে তোলা বিশেষায়িত স্কুল। এখানে রয়েছে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি খেলাধুলা, সংগীত ও বিনোদনের সুব্যবস্থা। বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২১৯। শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মচারী রয়েছেন ২২ জন। জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘দেশের শতকরা ১ ভাগ অটিস্টিক শিশুর পরিবারের নতুন সূর্যোদয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। তিনি শিশুদের ¯œায়ুবিক জটিলতা ও অটিজম বিষয়ে কাজ করছেন ২০০৮ সাল থেকে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেয়েছেন বিশেষ পরিচিতি।’ ডিসি বলেন, ‘সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় অটিজম নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে এ সম্মেলনের মাধ্যমেই। ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। এ সংস্থা ২০১৪ সালে তাঁকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। অটিজম আন্দোলন ও শিশু স্বাস্থ্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য আমেরিকার বারি ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড পান তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অটিজমবিষয়ক শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের অটিজম মোকাবিলা; এসডিজির আলোকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কৌশল’ শীর্ষক এক হাই-লেভেল ইভেন্টে মূল প্রবন্ধও উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের অটিজমবিষয়ক কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।’ বাংলাদেশ ১১ বছর ধরে অটিজম নিয়ে বহুমুখী ও বহুপাক্ষিক মডেল বাস্তবায়ন করছে। লক্ষ্যও অর্জিত হয়েছে অনেকাংশে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ১৯৯৯ সালে গঠিত হয়েছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের অধীন দেশে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে এনডিডি সেবা, ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি কাউন্সেলিং প্রভৃতি সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর