শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বান্দরবানে হামে ১০ শিশুর মৃত্যু

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান

পার্বত্য তিন জেলায় করোনায় ছোবলের মধ্যে আরেক আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে হাম রোগ। তিন জেলায় এ পর্যন্ত ১০টি শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে শুধু রাঙামাটির সাজেকেই মৃত্যু হয়েছে আটজনের। আর বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে মারা গেছে একজন করে। এ পর্যন্ত তিন জেলায় আক্রান্ত হয়েছে দুই শতাধিক শিশু। বান্দরবান সদরের চিম্বুক, টংগাবর্তী এবং থানছি, লামা উপজেলায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে দ্রুত চিকিৎসাসেবার অভাবে এ রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সবশেষ গতকাল থানছি উপজেলার দুই পল্লীতে হাম রোগে তিন শিশু আক্রান্ত হয়েছে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের অরুণপাড়ার প্রথম গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সাগরিকা (১৩) নামে এক শিশুর হামে মৃত্যু হয়। পরে অরুণপাড়া, লংতিয়ান পাড়া, কমলাপুর পাড়া, হাইচ্চাপাড়া ও তারুমপাড়ায় আরও ১৩৬ শিশু একই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত অরুণপাড়ায় পাঁচ ও লংতিয়ান পাড়ায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ গত ৩০ মার্চ রাতে সাজেকের উদোলছড়ি গ্রামে সুরেশ কুমারের ছেলে নিকেতন চাকমা (১৫) হামে মারা যায়। এর আগে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এক ত্রিপুরা শিশু এবং বান্দরবানের লামায় এক ম্রো শিশু মারা গেছে হাম আক্রান্ত হয়ে। সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলশন চাকমা বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত এখানে ৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সবশেষ উদলছড়ি গ্রামে মারা গেছে একজন। এখনো সাজেকের উদোলছড়ি, নিউঢাংনাং, কমলাপুর, শিবপাড়া, সাতনাম্বার পাড়া, বড়ইতলী, ডেবাছড়ি, কজইছড়ি, ভুয়াছড়ি, লাম্বাবাক ও উজানছড়িতে বহু শিশু হামস রোগে আক্রান্ত আছে। এসব গ্রামে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফতেখার আহমেদ জানান, এটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় একে আমরা হাম বলেই ধারণা করছি। বর্তমানে সাজেকে আমাদের দুইটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানান, এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত সাজেকের বিভিন্ন গ্রামের ১৭০ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সাজেকের শিয়ালদহ এলাকা আমাদের আরেকটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। এদিকে, গত ২৮ মার্চ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার রথিচন্দ্র কার্বারি পাড়ায় হামসদৃশ রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বনিকা ত্রিপুরা নামে ৯ বছরের এক শিশু মারা যায়। এ ঘটনার পর রথিচন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার আরও ২০ শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তারা বর্তমানে সুস্থ আছে। এছাড়া ১৩ মার্চ বান্দরবানের লামা উপজেলার পুরাতন লাইল্যা মুরুং পাড়ায় হাম আক্রান্ত হয়ে দুতিয়া মুরুং (৭) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার আক্রান্ত আরও ৩৫ শিশুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তারা সবাই এখন সুস্থ। বান্দরবান সিভিল সার্জন  অং সুই  প্রু মারমা জানান, শুধু থানছিতে নয় সদর উপজেলা টংগাবর্তী ইউনিয়নেও হাম রোগ দেখা দিয়েছে। সেখানেও খোঁজখবর নিতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলার কারণে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন স্থগিত রয়েছে। তবে চলতি মাসে আবর শুরু করা হবে।

সর্বশেষ খবর