শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বোরোয় আগ্রহ হারাচ্ছে বরেন্দ্রর কৃষক

♦ বাড়ছে উৎপাদন খরচ ♦ নেই পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বোরোয় আগ্রহ হারাচ্ছে বরেন্দ্রর কৃষক

বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের সরকারের কাছে দাবি, বোরো ধানের পানি সেচের খরচ না নেওয়ার। খেতে চারা লাগানোর পর অবসর সময়ে প্রান্তিক চাষিরা দিনমজুরী করে সেচের টাকা জোগাড় করে থাকেন। এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ না থাকায় সেচের অর্থ যোগাতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে তারা। রাজশাহী পবা ্পজেলার সিতলাই এলাকা থেকে গত শনিবার তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দিনে দিনে বাড়ছে সার-কীটনাশকের দাম ও শ্রমিক খরচ। মিলছে না ধানের ন্যায্য মূল্যও। ফলে বোরো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। ধানের বদলে গম, আলু, তুলাসহ অন্য ফসলে ঝুঁকছেন তারা। কোথাও ধানের জমিতে বানানো হয়েছে পুকুর। এছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে গভীর নলকূপ স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে না সরকার। অথচ এই অঞ্চলে বোরো চাষে সেচের প্রধান উৎস ভূ-গর্ভস্থ পানি। সব মিলিয়ে চলতি বোরো মৌসুমেও এই অঞ্চলে ধান চাষ গত বছরের চেয়ে কম হবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র মতে, ২০১২ সালে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ধান চাষ হয়েছিল ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমিতে। পরের বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ লাখ ৫২ হাজার ১২৮ হেক্টর। এরপর কোনো কোনো জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক মৌসুমে ধান চাষ কিছুটা বাড়লেও সার্বিকভাবে রাজশাহীতে বোরো চাষ কমছে। এখন আট জেলায় বোরো চাষ হচ্ছে ছয় লাখ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার সব উপজেলা অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৯২ সালে গঠিত হয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। ২০১৩ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে গভীর নলকূপ বসানোর অনুমোদন দিচ্ছে না কৃষি মন্ত্রণালয়। আবার সেচের কাজে ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারের সুযোগও যথেষ্ট পরিমাণে সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে এ অঞ্চলে বোরো চাষ কমছেই। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার এলাকার কৃষক আলী আকবর বলেন, গত বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। তবে এবার চাষ করবেন সর্বোচ্চ তিন বিঘায়। শ্রমিক খরচের পাশাপাশি ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবং ধানের দাম না পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন না। এবার ধানের পরিবর্তে গম আর আলু চাষ করছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা জানান, আগে জমিতে সেচ দিতে প্রতি ঘন্টা ১০০ টাকা দিতে হতো। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২৫ টাকা। ফলে ঘণ্টাপ্রতি তাদের অতিরিক্ত ২৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যা যোগ হচ্ছে লোকসানের খাতায়। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুর রশিদ জানান, গত বছর সেচ দিয়ে বিএমডিএ আয় করেছিল ১৭০ কোটি টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রা ২০০ কোটি। এই টাকায় বিএমডিএর সেচ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়। সেচের টাকা মওকুফ করার সুযোগ বিএমডিএর নেই। এটা সরকার চাইলে করতে পারে। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘ধানের পরিবর্তে কৃষক অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছে। এতে দেশে বিকল্প খাদ্যেরও সুযোগ হচ্ছে। আপাতত খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি দেখছি না।’

সর্বশেষ খবর