বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

চার বছর ধরে চাল উঠছে জানেন না কার্ডধারীরা

অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে জেলা খাদ্য অফিস

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা সফরুদ্দিন পেশায় ক্ষুদ্র চাষি। চার বছর ধরে তার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) চাল উঠছে-অথচ তিনি জানেন না তার নামে কার্ড আছে। হঠাৎ খবর পেয়ে ডিলারের ঘরে হাজির হন। তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে ৩০ কেজি চাল দেন ডিলার। জোর করে একসঙ্গে কার্ডে ১৫-২০টি টিপসই নেন। আর বলেন এ কথা কাউকে না জানাতে। এখন থেকে সফরুদ্দিন নিয়মিত চাল পাবেন বলেও জানান ডিলার জুলেখা বেগম। শুধু সফরুদ্দিনই নয় সুফিয়া, সামছুন্নাহার, জহুরাসহ এলাকার অনেকের অভিযোগ চার বছর ধরে তাদের নামে চাল উঠলেও তারা কিছুই জানেন না। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নাটোরের হালসা ইউপির ৯টি ওয়ার্ডে চাল বিক্রিতে এ রকম নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই করতে গেলে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। জেলা খাদ্য অফিস থেকে পাওয়া তালিকা ঘেঁটে অনিয়মের সতত্য মিলেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে গা ঢাকা দেন অপর এক ডিলার। সরজমিনে জানা যায়, ২০১৬ সালে হালসা ইউপির পাঁচটি ওয়ার্ডে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রির ডিলার মনোনীত হন ওয়ার্ড সদস্য ওহাব আলীর স্ত্রী জুলেখা বেগম। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৭৫৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে বছরে পাঁচবার জনপ্রতি ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। অপর চারটি ওয়ার্ডে ৭৫৩ জন উপকারভোগীকে চাল বিতরণের দায়িত্ব পান ডিলার ইয়াকুব আলী। চার বছরে অনেক উপকারভোগীই জানতেন না তাদের নামে কার্ড হয়েছে। কার্ড নিজেদের কাছে রেখে চাল তুলে আত্মসাৎ করেছেন ডিলাররা। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উপকারভোগীদের কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন হলে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। অভিযোগ অস্বীকার করে জুলেখা বেগম জানান, তার ডিলারশিপ বাতিল করার জন্য প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। মামলার পর থেকে পালিয়ে বেড়ানো ডিলার ইয়াকুব আলীর দাবি-তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা। হালসা ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। চারদিকে সমালোচনা শুরু হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, ‘চাল নিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। তালিকায় যাদের নাম আছে তারা কেন চাল পাচ্ছে না তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তালিকায় নাম আছে লোক নেই : জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, তালিকায় নাম আছে কিন্তু মানুষের অস্তিত্ব নেই গ্রামে। এমন ১১ জন ভিজিডি কার্ডধারী নারীর ১৪ মাস ধরে চাল উত্তোলন হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। এ ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে। ঘটনাটি ঘটেছে ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নে। ক্ষেতলালের ইউএনও আরাফাত রহমান বলেন, ‘বড়াইল ইউপির ভিজিডির তালিকায় ত্রুটি রয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তেও প্রমাণ মিলেছে।’

সর্বশেষ খবর