বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের হটস্পটখ্যাত নারায়ণগঞ্জে প্রশাসনের জারি করা লকডাউনের অপমৃত্যু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে শহরের রাস্তায় প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হচ্ছে রিকশা ও ব্যক্তিগত যানবাহনের জটলা। প্রতিদিন কর্মস্থলে ছুটছেন লাখো শ্রমিক। মার্কেটগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। লোক সমাগম ঠেকাতে শহরের মাকের্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। সরেজমিন গত মঙ্গলবার শহরের কালীবাজার, ডিআইটি মার্কেট, মূল চাষাঢ়া গোল চত্বর গিয়ে দেখা যায়, অটোরিকশা ও প্যাডেল চালিত রিকশাসহ পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘলাইন। রাস্তার পাশে খোলা হয়েছে দোকানপাট। সেখানে অবাধে বিচরণ করছে মানুষ। বিভিন্ন স্থানে ইফতারের দোকান ও কয়েকটি বিপণিবিতানে মহিলাদের ভিড়। সকাল থেকে ফতুল্লার বিসিক ও আদমজী ইপিজেডসহ শিল্প পল্লীগুলোতে ছুটে চলছে লাখো শ্রমিক। দফায় দফায় প্রতিদিন বেতন-ভাতা ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গার্মেন্ট শ্রমিকরা করছে আন্দোলন। গত সোমবার বিকালে শহরের কালীবাজার ফ্রেন্স মার্কেট কাপড়ের দোকানে ভিড় সামলাতে প্রশাসনকে মাইকিং করতে হয়েছিল। একপর্যায়ে সেখানে আসা পুরুষ ক্রেতাদের ওপর হালকা লাঠিচার্জ করা হয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মার্কেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফ্রেন্ডস মার্কেটের এক কাপড় দোকানি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকান খুলেছিলাম। ভাবতে পারিনি ক্রেতার এতো ভিড় হবে। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন ভিড়ের কারণে মার্কেট বন্ধ করে দিল। শহর শহরতলি বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন আগেও মানুষের মুখে মাস্ক, হাতে ছিল ছোট স্যানিটাইজার বোতল দেখা গেছে। সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি ১০ জনে তিনজনই মাস্ক পড়ছে না। বিশেষ করে রিকশাচালক ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষে মুখে মাস্ক নেই বললেই চলে। মুখের মাস্ক পকেটে রেখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। রাস্তায় প্রশাসনের লোক দেখলেই পকেটে থাকা মাস্ক পরে নিচ্ছে অনেক সচেতন নাগরিকও। শহরের মাসদাইর এলাকার রিকশাচালক হাবিব মিয়া বলেন, ‘ভাই বহু দিন বসা আছিলাম। মুখের ওই কাপড় দিয়ে আমগো কি হইব। আমরা যে নোংরা জায়গায় থাকি সেখানে কোটি কোটি জীবাণু থাকে। করোনাভাইরাস এখানে আসলে নিজেই মারা পড়ব।’ শহরের অক্টোফিস এলাকার দোকানি কাজল হায়দার জানান, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমে যাচ্ছে। দুদিন আগেও যারা মাস্ক পরে দোকানে আসত এখন তারা মাস্ক ছাড়াও আসছে। প্রসঙ্গত নারায়ণগঞ্জে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ৫৭ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ সুশীল সমাজের লোকও রয়েছেন।