বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় করোনা পরীক্ষায় ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ মানুষ

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ মানুষ। লোকজন আরও বেশি পরীক্ষা করা ও গতি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, নাঙ্গলকোটে করোনাভাইরাসে প্রথম দিকে আক্রান্ত  দুজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৪ দিন আগে। ফলাফলে ২০ দিন আগে তাদের করোনা পজিটিভ আসে। কিন্তু ২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর রবিবার  পর্যন্ত তাদের দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। ওই পরিবারের এক সদস্য জানান, ‘১৪ দিন পর নমুনা সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আসবে আসছে বলে আর আসেনি। এদিকে সামাজিকভাবে আমরা ভীষণ চাপের মধ্যে আছি।’ একই অবস্থা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের। ১১ দিন আগে তার করোনা শনাক্ত হলেও দ্বিতীয়বার আর নমুনা নেওয়া হয়নি। জেলার একজন সংবাদকর্মী ৫ দিন আগে নমুনা দিলেও কোনো খবর নেই। এদিকে কোটবাড়িতে বসবাস করা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, ‘তার মামার পরিবারে ৫ জনের করোনা উপসর্গ আছে। বিভিন্নভাবে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে বাসায় করোনা পরীক্ষার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হই। উপায় না পেয়ে তাকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে ভর্তি করালে তিন দিন পর নমুনা পরীক্ষা করা হবে জানানো হয়। বাধ্য হয়ে ওপর মহলে যোগাযোগ করলে শনিবার মামার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।’ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী ও বিভিন্ন জেলায় কর্মরতদের বাদ দিলেও কুমিল্লায় স্থিতিশীল জনসংখ্যা ৫০ লাখের মতো। দেশে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় করোনা সন্দেহে রবিবার পর্যন্ত ১৮৭৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও কুমিল্লায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮৪১ জনের। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ২০৩ জনের। ফল এসেছে ৮ হাজার ২৯৫টির। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পর দুই শিফটে প্রতিদিন ন্যূনতম যদি ১৫০ জনের নমুনা পাঠানো হয়, তাহলে গত মে মাসে শুধু এ প্রতিষ্ঠান থেকেই সাড়ে চার হাজারের বেশি নমুনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করার কথা। কোনো কোনো দিন তিন শিফটে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শনিবার এক দিনে মেডিকেল কলেজ থেকে ২৭১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে কর্তৃপক্ষ। জেলার ১৭ উপজেলা থেকে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

 সিটি করপোরেশন থেকেও নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। কিন্তু বিপুল জনসংখ্যার এ জেলা থেকে গত দুই মাসে মাত্র নয় হাজারের কিছু বেশি নমুনা সংগ্রহে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জেলায় গণহারে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলেও আনুপাতিক হারে সাধারণ জনগণ কম আক্রান্ত হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না তা নিয়ে জেলার বিভিন্ন মহলে তুমুল আলোচনা চলছে। দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় ঠিক কী পরিমাণ মানুষ সুস্থ হচ্ছে তা জানা যাচ্ছে না। একইভাবে পরীক্ষা অনেক কম করায় নীরবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। নীরব বাহক হয়ে উপসর্গবিহীন রোগীরা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, আমাদের  স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব আছে। স্ব-স্ব উপজেলায় ঠিকঠাক মতো নমুনা সংগ্রহ করা হলে গ্রাম থেকে কারও কুমিল্লা মেডিকেলে আসার কথা নয়। নমুনা কম সংগ্রহ ও  দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না হওয়ায় জনগণ ঝুঁকির মধ্যে আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা না করা গেলে বিপদ বাড়বে।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, এক লাখ ব্যক্তি হটলাইনে ও বিভিন্নভাবে নানা উপসর্গের কথা বলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করল, এক লাখ ব্যক্তিকে তো পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না। সুনির্দিষ্ট উপসর্গ যাদের আছে, তাদের পরীক্ষা হচ্ছে।  কারও সমস্যা থাকলে উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করলে সমস্যা সমাধান করবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষাও উপজেলা পর্যায়ে হবে।’ আক্রান্ত ডাক্তারের দ্বিতীয়বার নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ডাক্তার নিশ্চয় জানেন, কোন প্রক্রিয়া মেনটেইন করে তিনি দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করবেন। তাকে যোগাযোগ করতে বলুন। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে  অবহেলা হলে তবে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন।

সর্বশেষ খবর