মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

কিস্তির জালে বন্দি জীবন

এনজিওগুলো মানছে না সরকারি নির্দেশনা

নাটোর ও বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি

করোনাকালেও নাটোরে বিভিন্ন এনজিও তুলছে কিস্তির টাকা। মোবাইলে ফোনে চাপ সৃষ্টি করাসহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে। সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছেন না। কেউ স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিলে তা নিচ্ছেন। জেলার হরিশপুরের সালেহা জানান, আশা থেকে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি দিতে চাননি বলে তার সঞ্চয় থেকে পাওনা কেটে নিয়েছে। তেবাড়িয়ার রাবেয়া জানান, তিনি উত্তরা ডেভলপমেন্ট সোসাইটি থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। বাসায় এসে মাঠকর্মী বলে গেছেন আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা দিতে হবে। স্টেশন বড়গাছার শবনম জানান, তিনি ঋণ নিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। কর্তৃপক্ষের লোকজন হুমকি দিয়েছে আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা না দিলে ব্যবস্থা নেবে। একই অভিযোগ করেন এসএসএস থেকে ঋণ নেওয়া কান্দিভিটার ফেন্সি, বেবী এবং আশা ও ব্র্যাক থেকে ঋণ নেওয়া একই এলাকার বিপাশা। হযরত আলী নামে এক ব্যক্তি জানান, তাকে বলা হচ্ছে কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য। না হলে টাকার পরিমাণ বেড়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে লোন পাবেন না। হযরত আলী বলেন, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে এরা টাকা চাচ্ছে কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এনজিও যেখানে টাকা তুলছেন, সেখানে আমাদের মতো ছোট সংস্থা টাকা আদায় বন্ধ রেখে বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এনজিও প্রতিনিধিরা জানান, সরকার জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ কারণে আমরা কাউকে চাপ দেই না। যেহেতু আমাদের অফিস খোলা সে কারণে কিস্তির টাকা গ্রহণ করছি। নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ জানান, চলতি জুন মাস পর্যন্ত এনজিওর কিস্তি তোলায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কিস্তি তোলার অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় এনজিওগুলো। করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য। তার ওপর এনজিওর কিস্তি পরিশোধের ‘তাগাদা’য় দিশাহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাদের বাধ্য না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না তারা। সূত্র জানায়, বিশ্বনাথে প্রায় ১০টি এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এনজিওকর্মীরা প্রতিদিন ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিস্তি পরিশোধে তাগাদা দিচ্ছে। কিস্তি আদায়ে মানসিক চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এক এনজিওকর্মী জানান, অফিসের নির্দেশনা মেনে তাদের কাজ করতে হয়।

ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান বলেন, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ৩০ জুন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে জোর করে ঋণ আদায়ের সুযোগ নেই। এর ব্যতিক্রম হলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর