সোমবার, ২২ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

১০ টাকার চাল নিয়ে চালবাজি

তালিকায় বাবা মুসলমান ছেলে হিন্দু, আছে মৃত ব্যক্তিদের নামও

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় একই ব্যক্তির নাম রয়েছে একাধিকবার। যে গ্রামে কোনো হিন্দু পরিবার নেই, তালিকায় সে গ্রামেই দেখানো হয়েছে অনেক হিন্দু উপকারভোগীর নাম। এমনকি পিতা মুসলমান, ছেলে হিন্দু আবার কোনোটায় স্বামী মুসলমান, স্ত্রী হিন্দু এমন অসংখ্য নাম রয়েছে। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের নামও আছে তালিকায়। তালিকা যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও।

জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল প্রাপ্তির তালিকায় মোট উপকারভোগী এক হাজার ১৮৫ জন। ২০১৬ সালে ওই তালিকাটি করা হয়। তখন থেকে উপকারভোগীদের চাল পাওয়ার কথা থাকলেও অনেকে এখনও পাননি সে সুবিধা। একটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধানে নেমে উঠে আসে অনিয়মের চিত্র। তালিকা যাচাইয়ে দেখা যায়, কোনো নাম চার বার, কোনোটা তিন বার তালিকায় রয়েছে। একাধিকবার নাম আছে প্রায় ৫০ জনের। রয়েছে কয়েকজন মৃত ব্যক্তির নামও। কয়েকটি গ্রামে হিন্দু পরিবার না থাকলেও দেওয়া হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের নাম। তালিকায় রয়েছেন অথচ একবারও চাল পাননি-এমন লোকের সংখ্যাও অনেক। তারালিয়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, তালিকায় ওই গ্রামের যাদের যে নাম রয়েছে গ্রামবাসী তাদের অনেককেই চেনেন না। ওই গ্রামের প্রায় ২২ জনের নাম আছে তালিকায়, বাস্তবে চাল পান মাত্র তিনজন। বাকি নাম ব্যবহার করে সংশ্লিষ্টরা চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। গজনাইপুর ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, তারা ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তালিকায় ৫০টি করে নাম দিয়েছেন। বাকি নামের বিষয়ে তাদের জানা নেই। নিজ এলাকার ভুয়া নামে ভরা এই তালিকা দেখে তারাও ক্ষুব্ধ। গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সবার সমন্বয়ের মাধ্যমেই করা হয়েছে এ তালিকা।  তিনি বলেন- এটা আমাদের একটা গাফিলতিও বলা যায়। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি। নবীগঞ্জের ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের ইউনিয়ন খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি হচ্ছেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের মূল দায়িত্বই হচ্ছে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো। এই তালিকা প্রণয়নে যদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কোনো অনিয়ম করে তাকে তাহলে সেটি তদন্তে উঠে আসবে। ইউপি চেয়ারম্যানই শুধু নয় আরও কেউ জড়িত তাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পরিবেশনের দায়িত্বে রয়েছেন দুজন ডিলার লিটন চন্দ্র দেব ও মনর মিয়া। নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে লিটন চন্দ্র দেবের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর