বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ঘুষ ছাড়া মেলে না বিনামূল্যের ঘর

ঘরপ্রতি ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ

গৌতমাশিস গুহ সরকার, গাইবান্ধা

ঘুষ ছাড়া মেলে না বিনামূল্যের ঘর

গাইবান্ধার সাঘাটায় সরকারিভাবে তৈরি বিনামূল্যের ঘর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধায় হতদরিদ্রদের জন্য সরকারিভাবে তৈরি বিনামূল্যের ঘর বিতরণে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে সাঘাটা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রকল্প সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। প্রকল্প কমিটিতে ইউপি চেয়ারম্যানরা সভাপতি এবং মেম্বাররা সদস্যের দায়িত্বে আছেন। এ তিন ইউনিয়নে ২২টি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিনগরে সাত, কচুয়ায় সাত ও ঘুড়িদহ ইউনিয়নে আটটি। সরকারি ঘর পাওয়া মুক্তিনগর ইউনিয়নের ধনারুহা গ্রামের স্বপ্না বেগম জানান, তার স্বামী নির্মাণশ্রমিক। ইউপি সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ সাজু কম খরচেই পাকা ঘর পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। দুটি পাকা রুম একটি রান্নাঘর বাথরুমসহ দেড় লাখ টাকায় দিতে চান তিনি। ধারদেনা ও নিজের জমানো এক লাখ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন মেম্বরের হাতে। এ ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের স্ত্রী সোহাগিনী বলেন, একটি ঘর  পেতে ইউপি চেয়ারম্যান আরশাদ আজিজ রোকনকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ধানঘড়া গ্রামের দুদু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জিলা জানান, ঘরের জন্য গরু বিক্রি করে ৮০ হাজার টাকা দেই মুক্তিনগর ইউপি চেয়ারম্যানের হাতে। কচুয়া ইউনিয়নের নতুন ঘরের তালিকা শুরু হতে না হতেই টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ইউনিয়নের উল্যাসোনাতলা গ্রামের ভ্যানচালক শাহজাহান আলী বলেন, আমি ঘরের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে ৯০ হাজার টাকা দিয়েছি। ঘরের কাজ শুরু হলে আরও ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। একই গ্রামের রিকশাচালক চাঁন মিয়া জানান, সরকারি ঘরের খোঁজ নিতে চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এক লাখ টাকা দাবি করেন। নগদ এক লাখ টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছি। একই চিত্র ঘুড়িদহ ইউনিয়নেরও। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে মুক্তিনগর ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঘর বিতরণ করেন মেম্বাররা। তারা কিভাবে কি করছে খোঁজ নিয়ে দেখব।’ এই ইউনিয়নের অভিযুক্ত মেম্বার অব্দুল ওয়াহেদ সুজা বলেন, ‘আমি টাকা নিয়েছি কিন্তু সেটা মাটি কাটার জন্য ঘরের জন্য নয়। অপর মেম্বার শামসুজ্জোহা ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন।’ কচুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। সরকারি ঘরের জন্য কোনো টাকা নেইনি।’ ঘুড়িদহ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কামাল আজাদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে ঘর বিতরণে কারও অনৈতিক লেনদেন হয়নি।’ সাঘাটার ইউএনও মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যান-মেম্বাররা উপকারভোগীর তালিকা দেন। ঘর দেওয়ার কথা বলে ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, ঘর বিতরণে অনিয়ম হলে কোনো ছাড় নেই। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর