মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

রংপুরের চাকরি হারানো লাখ লাখ মানুষ গ্রামে

ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন অনেকে

নজরুল মৃধা, রংপুর

এক সময় আশ্বিন-কার্তিক মাসে রংপুর বিভাগের মানুষের কাজ থাকতো না। তখন লাখ লাখ লোক কর্মহীন অবস্থায় থাকতো। এবার করোনার ছোবলে রংপুর বিভাগের দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষ চাকরি হারিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে এসেছেন। এখানেও কাজ না থাকায় বেকার রয়েছেন তারা। অনেকে ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছেন। এক সময় তারা খাদ্য সংকটে পড়বেন বলে শঙ্কা বিশিষ্টজনদের। কর্মহীন এ সব মানুষের সঞ্চয় ইতোমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সমাজের নানা স্তরে। চাকরি হারানো বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামে আসায় কর্মসংস্থানের অভাব প্রকট হয়ে পড়েছে। অভাব-অনটনে পড়ে অনেকেই জীবিকার তাগিদে অসৎ পথ অবলম্বন করতে পারে। ফলে বেড়ে যাবে অপরাধ প্রবণতা। এক সময় মঙ্গা এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল রংপুরের গঙ্গাচড়া। এর পরে অবস্থান ছিল কুড়িগ্রামের। এলাকায় কাজ না থাকায় তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হওয়া পরিবারের প্রধানরা আয়ের সন্ধানে বছরের বেশিরভাগ সময় থাকতেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। কেউ গার্মেন্ট কর্মী, কেউ রিকশাচালক আবার কেউ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। করোনাকালে এদের অনেকেই চাকরিচ্যুত হয়ে নিজ গ্রামে ফিরেছেন। তিস্তার চরের আব্দুল মতিন ঢাকার শাহবাগে গার্মেন্টে কাজ করতেন। করোনায় ওই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, হাতে যা সঞ্চয় ছিল তা শেষের পথে। এর পর সংসার কিভাবে চলবে এ নিয়ে চিন্তিত রয়েছি। রংপুর নগরীর তাজহাট এলাকার হাসেন আলী (৫৫) ঢাকা ওয়ারীতে প্রেসে কাজ করতেন। চাকরি চলে যাওয়ায় তিনি এখন বেকার। কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী এলাকার জবেদা ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। করোনা আতঙ্কে বাড়িওয়ালা তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়ায় এলাকায় ফিরে এসেছেন। তিনি জানান, সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে ছোট্ট ঘর করে আছেন। করোনাকালে এলাকায়ও কেউ কাজে নিতে চায় না। অনেক কষ্টে দিন কাটছে তার। এদের মতো অবস্থা এ অঞ্চলেন লাখ লাখ মানুষের। রংপুর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, যেভাবে এ অঞ্চলের মানুষ বেকার হচ্ছে তা দেখে মঙ্গার শঙ্কা জেগেছে। এ সব মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের পাশাপশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, শিল্প-কলকারখানার মালিকরা যেন তাদের প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে পারেন সেজন্য সরকার প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। কর্মহীনদের জন্য ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। চালু করা হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।

সর্বশেষ খবর