মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

খননে নাব্য ফিরেছে পাগলায়

চাষাবাদে সুবিধা বেড়েছে ধরা পড়ছে প্রচুর মাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

খননে নাব্য ফিরেছে পাগলায়

খননের পর পানিতে ভরে গেছে পাগলা নদী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাগলা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ এলাকা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরপর শিবগঞ্জের কানসাট, তক্তিপুর, বহলাবাড়ি, ঘোড়াপাখিয়া হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সতেরোরশিয়া, চামা দিয়ে কালিনগর এলাকায় নদীটি মহানন্দার সঙ্গে মিলেছে। নদীটির গতিপথ ৪১ কিলোমিটার। এক সময়ে নদীটি ভরাট হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি খননের পর এ নদীতে নাব্য ফিরেছে। জানা যায়, নদীটির নাব্য ফিরিয়ে আনতে এটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেল্টাপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ নদী খনন প্রকল্পের সঙ্গে সাড়ে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি খালও আছে। সব প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গত বছরের এপ্রিলে। পাগলা নদী খনন এখন শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে যৌবন ফিরে পেয়েছে নদীটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী পুনঃখনন কাজ পায়। ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে খনন প্রায় শেষ। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে। পাগলা নদীর ওপর রেহাইচর এলাকায় নির্মিত হচ্ছে সেতু। গত শনিবার সকালে নির্মাণাধীন সেতুর উপর দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আফসার আলী জানান, বর্ষার কয়েক মাস ছাড়া সারা বছর হেঁটেই এ নদী পার হওয়া যেত। খননের ফলে এখন নদীতে থৈ থৈ পানি। সেতুও হলো। আমরা খুব উপকৃত হলাম। সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এক সময় পাগলা নদী খুব খরস্রোতা ছিল। ধীরে ধীরে নদীটি মরে যায়। এবার খননের ফলে নদী তার নাব্য ফিরে পেয়েছে। এবার নদীপাড়ের মানুষ যে পরিমাণ মাছ ধরেছেন বিগত ২০-৩০ বছরেও তা পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, নদীর পানি ব্যবহার করে দুই পাড়ে চাষাবাদও হচ্ছে ভালোভাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের এমপি ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, ‘পাগলা নদী খননের ফলে পানি প্রবাহ বেড়েছে। নদীতে মাছ বেড়েছে। এখন নদীর দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করব। পাশাপাশি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।’ তিনি বলেন, নদীর নাব্য ফেরায় একটা নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনেছি। সেটা এই নদীতে চলবে। চরাঞ্চল থেকে রোগী আনার জন্য আরেকটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনছি।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, নদী খনন প্রকল্পের ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে পানি এসেছে। প্রতিবছরই পানি থাকবে। এই পানিটা এখন ধরে রাখার জন্য ড্যাম নির্মাণ করতে হবে। তাহলে জেলাবাসী সুফল পাবে।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, খননের ফলে পাগলা নদী তার পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে। এখন পানির প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে নদীপাড়ের জীবন-জীবিকা ও কৃষিকাজে খুব ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এভাবে যদি শুকিয়ে যাওয়া সব খাল ও নদী-নালা খনন করা হলে নাদীমাতৃক বাংলাদেশের আসল রূপ ফুটে উঠবে।

সর্বশেষ খবর