সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার মধ্যে বন্যার হানা সর্বস্বান্ত পাবনার তাঁতিরা

সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা

করোনার মধ্যে বন্যার হানা সর্বস্বান্ত পাবনার তাঁতিরা

বেড়া উপজেলার নতুন পেঁচাকোলা গ্রামের বন্যায় ডুবে যাওয়া একটি তাঁত কারখানা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাসের লকডাউন ও সাধারণ ছুটিতে বেচাকেনা হয়নি পয়লা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরের মৌসুমে। সারা বছরের পুঁজি হারিয়ে কোনোমতে ঈদুল আজহায় লুঙ্গি বিক্রির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন পাবনার বেড়া উপজেলার তাঁতিরা। ঠিক এমন সময়েই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সর্বনাশা বন্যা। একের পর এক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে তাদের। তাঁতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় তাদের তাঁতযন্ত্রই শুধু নষ্ট হয়নি, ঋণের টাকায় কেনা রং-সুতাও নষ্ট হয়েছে।

ভুক্তভোগী তাঁতিরা জানান, করোনায় কাজ না থাকায় মাস তিনেক প্রায় সবাই তাঁতই বন্ধ রেখেছিলেন। কোরবানির হাটকে সামনে রেখে সপ্তাহ তিনেক আগে ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ চেষ্টা ছিল তাদের। এনজিও ঋণ ও ধারদেনা করে কোনোমতে সবাই কমবেশি তাঁত চালু করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহখানেক আগে বন্যার পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার মুজিববাঁধ তীরের তাঁতপল্লীর গ্রামগুলোর তাঁতঘরসহ বাড়ির বসতঘরগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আত্মীয়বাড়িসহ অন্যের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে এসব পরিবারের লোকজন। শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, বন্যায় বেড়া উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মালদাপাড়া, পেঁচাকোলা, উত্তর পেঁচাকোলা, রাকশা, সাফুল্যাপাড়া, বাটিয়াখরা, নেওলাইপাড়া, সোনাপদ্মা, রূপপুর, খানপুরাসহ তাঁতসমৃদ্ধ অন্তত ১৫টি গ্রাম রয়েছে। করোনার কারণে গ্রামগুলোর ১০ হাজার তাঁতশ্রমিক এমনিতেই ধুঁকছিলেন। বন্যা তাদের পথে বসিয়েছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বসতঘরগুলোও। সবচেয়ে বড় কথা হলো পানিতে ডুবে থাকায় তাঁতযন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন তারা জীবন-জীবিকা নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন।  তাঁতঘর, বসতঘর ও অকেজো তাঁত অন্যখানে সরিয়ে নেওয়া ও মেরামতের চিন্তায়। এর সঙ্গে খাবার জোগাড়ের চিন্তা তো আছে বলে তাঁতিরা জানান।  পেঁচাকোলা গ্রামের তাঁতপল্লীতে হাতেগোনা ১০-১২টি তাঁত কারখানা ছাড়া প্রায় সবকটি কারখানায় ঢুকেছে বন্যার পানি। কারখানায় হাঁটু পানির মধ্যেই কেউ কেউ লুঙ্গি তৈরির কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন। তবে, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এসব কারখানা ডুবে যাবে বলে জানান তাঁতিরা। সোলেমান শেখ নামের একজন তাঁতি বলেন, ‘করোনার জন্নি এমনিতেই আমাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়া গেছিল। শেষ সম্বল তাঁত দুইখান নিয়্যা বাঁচার আশা করিছিল্যাম। কিন্তু বন্যায় সেই আশাও শেষ হয়া গেল।’ নেওলাইপাড়া গ্রামের রজব আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঈদের হাটের কথা চিন্তা করে কয়দিন আমার পাঁচখান তাঁত থেকে লুঙ্গি বুনাইয়ে বেড়া ও শাহজাদপুর বিক্রি করলাম। এহন তো তাঁত ঘরই ডুবে গেছে। ধার করে অনেক টাকার সুতা ও রং কিনিছিলাম, এখন সব শেষ। বউ-পোলাপান নিয়ে অন্যের বাড়িতে রইছি। একেবারে সর্বস্বান্ত হয়া গ্যালাম।’ হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিল্টু মিয়া বলেন, আমার ৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পেঁচাকোলা ও নতুন পেঁচাকোলা গ্রামে অন্তত পাঁচ-সাতশ তাঁতি পরিবার বন্যাদুর্গত। উপজেলায় অন্যান্য গ্রামে আরও হাজারের বেশি তাঁতিদের একই অবস্থা। করোনার পর বন্যার আঘাতে তাঁতিরা নিঃস্ব হওয়ার পথে। এসব এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা দেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানান।

ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, বন্যাকবলিত তাঁতিদের বিষয়টি আমি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখব। বন্যাকবলিতদের জন্য আলাদা কোনো ত্রাণ সহায়তা না এলেও ঈদ উপলক্ষে উপজেলায় বড় ধরনের ত্রাণ সহায়তার (ভিজিএফ) চাল এসেছে। এসব ত্রাণ বিতরণে অসহায় তাঁতিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর