রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সেচ সংকটে পড়বে তিন হাজার একর জমি

দখল-ভরাটে অস্তিত্ব সংকটে বেরুলা খাল

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সেচ সংকটে পড়বে তিন হাজার একর জমি

মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে খাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বেরুলা খাল। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ফতেপুর গ্রাম থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে নোয়াখালীর চৌমুহনী গিয়ে। শত বছরের প্রাচীন খালটি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও খালের ওপর দোকান-বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণে খালটির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। সড়ক বর্ধিত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় খালটির অধিকাংশ ভরাট করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে খাল পরিণত হয়েছে ড্রেনে। খালটি দখল-ভরাটের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বর্ষকালে যেমন জলাবদ্ধা সৃষ্টি হবে তেমনি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব দেখা দেবে। নষ্ট হবে প্রাকৃতিক মাছের উৎস। কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ উপজেলার তিন সহস্রাধিক একর কৃষি জমি পড়বে সেচ সংকটে।

স্থানীয় সূত্র মতে, এ খাল দিয়ে নোয়াখালী থেকে নৌকায় লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে মালামাল বহন করা হতো। পালতোলা নৌকায় বসে মাঝি তার কণ্ঠে সুরের মায়াজাল বুনতেন। খালে মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন স্থানীয় জেলেরা। দখল আর অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণে খালের প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। খননের অভাবে খালটি এখন ড্রেন হয়ে গেছে। বেরুলা খালের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জের বিভিন্ন শাখা খালের। বেরুলা খাল ভরাট হলে জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে লাকসাম উপজেলার উত্তরদা, আজগরা, মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার ও নোয়াখালী সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন। মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খালটি ভরাট হয়ে গেলে এ অঞ্চলের মানুষ জলাদ্ধতার কবলে পড়বে। কৃষি জমি পড়বে সেচ সংকটে। লাকসামের ইউএনও এ কে এম সাইফুল আলম বলেন, যতটুকু জেনেছি খালের মালিকানা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ)। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি সেচ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, কৃষিকে বাঁচাতে প্রবাহমান খালের বিকল্প নেই। বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খাল ভরাট করা বেআইনি। সেটা যেই করুক। পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষিকে বাঁচাতে নদী-খাল রক্ষা করতে হবে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বলেন, খাল ভরাটের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সওজ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

সর্বশেষ খবর