শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ছয় মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খুন অর্ধশতাধিক

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পারিবারিক কলহ, আধিপত্য বিস্তার এবং একাধিক সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ৬ মাসে অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। কখনো নিজ বাড়ির খাটের নিচ থেকে জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আবার কখনো প্রতিপক্ষের লোকজনকে বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে দল বেঁধে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যাসহ বিভিন্ন কায়দায় হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। কোনো কোনো সময় সড়ক-মহাসড়ক ও জলাশয়ে মিলছে মরদেহ। চলতি বছরের মে থেকে অক্টোবর  পর্যন্ত ৬ মাসে অর্ধশত হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এ সকল হত্যাকান্ডের ঘটনায় পৃথক পৃথকভাবে মামলা হলেও অনেক আসামি এখনো রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের গড়িমসি এবং খুনের মতো ঘৃণ্য ঘটনায় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে আপসের মতো অপসংস্কৃতির কারণেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। তাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। জানা যায়, আলোচিত এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর লামা বায়েক গ্রামের জোড়া খুন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাওনা টাকা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন ইশান ও মনির নামের দুই যুবক। গেল  দেড় মাসে এই হত্যা মামলায় মাত্র দুজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য আসামিরা রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। নিহত ইশানের বাড়িতে দেখা যায়, সন্তান হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ মা আকলিমা আক্তার ও বাবা মিজানুর রহমান। তারা কিছুতেই তাদের সন্তানের এই নির্মম হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছেন না। পুত্রশোকে কাতর হয়ে বার বার মূর্ছা যান নিহত ইশানের মা আকলিমা আক্তার। এ সময় তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, ছেলেই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। অনেক শ্রম অনেক প্রচেষ্টা দিয়ে তাকে লালন-পালন করেছি। আমার ছেলেকে যারা মেরে ফেলেছে তারা এখনো ঘোরাফেরা করছে। এসব আসামির হুমকি-ধমকিতে আমাদের আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। নিহত ইশানের বাবা মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকান্ডের এতদিন পার হলেও আসামিরা ধরা পড়ছে না। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর, সরাইলসহ জেলার ৯টি উপজেলাতেই এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২টি জোড়া খুন, ব্যাংক ডাকাতি চেষ্টায় খুনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেওয়ারিশ মরদেহও উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এতে অন্তত শতাধিক জনকে আসামি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সব মামলার সঙ্গে জড়িত অনেক হোতাকে আইনের আওতায় আনলেও মামলার অধিকাংশ আসামি রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অপরাধের ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে ও তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশের গড়িমশির কথা উল্লেখ করে জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য আবদুন নূর বলেন, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে সামাজিক অস্থিরতাসহ খুন-খারাবি বাড়ছে।

যথাযথ আইন প্রয়োগের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এতে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তিনি, একা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর দায় না চাপিয়ে সমাজে অপরাধ বন্ধ করতে পুলিশ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজপতিসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শফিউল আলম লিটন বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। একটা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দমন করা গেলে কেউ অপরাধ করতে সাহস পাবে না। আপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলেই অপরাধীরা অপরাধ থেকে দূরে থাকবে।  পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। হত্যাকান্ডগুলো পারিবারিক কলহ, দলীয় কিংবা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণসহ হত্যাকান্ডের বেশির ভাগ রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় এনেছি।

সর্বশেষ খবর