শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৭ কর্মকর্তার অভিযোগ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে আদিতমারী উপজেলা প্রশাসনের ১৭ জন কর্মকর্তা হুমকি, অসদাচরণসহ নানা অভিযোগ এনে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালীন ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ইউএনও ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিতন্ডা শুরু হয়। গত ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কাছে ভিজিডি ও মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের অংশ দাবি করেন। চেয়ারম্যানের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বিধি মোতাবেক তালিকা প্রণয়নের কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এর কিছুক্ষণ পরে ইউএনও অফিস-সংলগ্ন করিডোরে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরাটি উপজেলা চেয়ারম্যান তার একজন ব্যক্তিগত লোক দিয়ে খুলে ফেলতে থাকেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিতে এলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সিসি টিভি ক্যামেরা খোলার দৃশ্যটি মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে গেলে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে ‘বেশি কথা বললে ফল ভালো হবে না’ বলে শাসিয়ে দেন। এ অবস্থায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চেয়ারম্যানকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে উত্তেজিত হয়ে ‘প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদ থেকে বের করে দেব’ বলে হুমকি দেন। এ সময় অন্যান্য অফিসাররা এর প্রতিবাদ জানালে তাদেরও গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যান। খবর পেয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সম্প্রতি উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা নুরেলা আকতারকে চেয়ারম্যান তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং কর্মচারী ডেকে বলতে থাকেন বাড়াবাড়ির ফল ভালো হয় না। কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও চেয়ারম্যান বিধি বহির্ভূতভাবে বরাদ্দের ভাগ চান। উপজেলা কৃষি অফিসার আলীনুর নীতিবহির্ভূত কাজ করতে না চাওয়ায় চেয়ারম্যান তাকে ফোনে হুমকি দেন। এ কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হয়। উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে চেয়ারম্যান নিজেকে সভাপতি দাবি করে বরাদ্দের ভাগ দাবি করেন। সমাজসেবা অফিসার বিধিবহির্ভূত কাজ করতে না চাইলে সমাজসেবা কর্মকর্তা রওশন আলী মন্ডলকে ফোনে হুমকি দেন।

এ ছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ভাতা কার্যক্রমের রেজুলেশন ও উপজেলা কমিটির তালিকায় চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ভাতা কার্যক্রম অনেক বিলম্বে শুরু হয়। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আদিতমারী উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের কিসামত চরিতাবাড়ি মৌজার বাদিয়ারচড়া এলাকায় গত এক সপ্তাহ আগে খাসজমি চিহ্নিত করে ফ্লাগ ও ব্যানার স্থাপন করলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তা অপসারণ ও কর্মকর্তাদের হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগ থেকে জানা গেছে। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দিয়েছেন গত ১২ নভেম্বর। আবেদনের অনুলিপি সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে উপজেলার ১৭ জন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেছেন। আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি পরিবারে চলতে গেলে সামান্য কিছু ভুলত্রুটি থাকবে। এগুলো আমরা নিজেরাই বসে ঠিক করতে পারতাম। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেটি না করে আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন লোকজন মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ভিজিডি কার্ডের জন্য এসে থাকেন। এজন্য আমি কিছু বরাদ্দ দাবি করেছিলাম কিন্তু তারা আমাকে বিধির কথা বলেছেন। এ কারণে আমি সভাস্থল ত্যাগ করেছি। সিসি টিভির লাইন খোলা ছিল আমি সেটি লাগানোর জন্য লোক তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু ইউএনও আমার সামনেই আমার লোককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সবই মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, এমন পরিবেশে সরকারি কর্মকর্তাগণের চাকরি করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। আমরা সব অফিসার এর প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। এ ছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুলিপি দিয়েছি। লামনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনা তদন্ত করার জন্য লালমনিরহাট স্থানীয় সরকারের উপপরিচালককে (ডিডিএলজি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর