শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

থানায় শালিসে ধর্ষণ মামলার বিচার

মাতবরদের জমজমাট অর্থবাণিজ্য

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থানায় পুলিশ ও গ্রাম্য মাতবরদের শালিস বৈঠকে নগদ অর্থের বিনিময়ে মীমাংসা করা হচ্ছে। একইভাবে জমির সমস্যা, পাওনা টাকা আদায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসায় প্রতিদিন বসানো হয় শালিস। জানা যায়, উপজেলার পদমপুর গ্রামের এক তরুণীকে বিয়ের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে সংসার করেছেন নেকমরদ বিলপাহাড় গ্রামের হুমায়ুন কবির। প্রতিবাদ করায় তরুণীকে হুমায়ুনসহ তার পরিবারের লোকজন বেধড়ক মারপিট করেন। এ ঘটনায় ওই তরুণী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে এএসআই বুলু মিয়া তদন্তের দায়িত্ব পান। কিন্তু ভুক্তভোগীকে আইনি কোনো সহযোগিতা না করে উল্টো হুমায়ুনের পক্ষ নিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য হুমায়ুনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ জরিমানার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা থানা পুলিশ ও মাতবরদের জন্য রেখে বাকি টাকা তরুণীর পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে বিচার নিষ্পন্ন করা হয়। জানা যায়, উপজেলার রাউতনগর চড়োলপাড়ার আবুল কালামের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় হরিপুর উপজেলার যাদুরানী বাজার এলাকার শুকুর আলীর ছেলে মাসুদ রানা। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা মাসুদ রানাকে আটক করে থানায় খবর দেয়। পরে এএসআই বুলু মিয়া তাকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরের দিন বিচার শালিসের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করে ২০ হাজার টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা বাদীর হাতে তুলে দেন।

এ ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে বাদী-বিবাদীর পরিবার। জানতে চাইলে এএসআই বুলু মিয়া এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো সমস্যায় পড়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেই তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে যেতে তেল খরচ বাবদ নগদ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কোনো অপরাধমূলক ঘটনার বাদী-বিবাদী নিজেদের পক্ষে বিচার ফয়সালা হওয়ার জন্য মাতবর ও দালালদের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকায় রফাদফা করেন। গ্রাম্য মাতবর ও দালালরা এসব ঘটনার বিচার সংশ্লিষ্ট পুলিশ (পরির্দশক, উপ-পরিদর্শক, সহকারী উপ-পরিদর্শক) সদস্যের সঙ্গে কথা বলে তা নিশ্চিত করেন। এতে থানায় জমে উঠেছে বিচার শালিসের নামে জমজমাট অর্থবাণিজ্য। এমন শালিস বিচারের কারণে অপরাধীরা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করে এলাকার সচেতন মহল।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিতেন্দ্রনাথ বর্মণসহ একাধিক ইউপি সদস্য বলেন, পুলিশ যেভাবে সব ঘটনা আমলে নিয়ে বিচার শালিস করছে, তাতে আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। পুলিশের এমন বিচার শালিসের মাধ্যমে গ্রাম আদালতকে অবমাননা ও স্থানীয় বিচারব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

থানা পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল লতিফ সেখ বলেন, ছোটখাটো সমস্যাগুলো স্থানীয় মাতবর অথবা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের উপস্থিতিতে গ্রাম আদালতের অংশ হিসেবে শালিস করে থাকি।

রানীশংকৈল সার্কেল এএসপি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, থানায় বিচার শালিস করার কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর