রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কান্না থামেনি উপকূলবাসীর

আজ সিডরের ১৩ বছর

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

কান্না থামেনি উপকূলবাসীর

সিডরে মেয়ে ও দুই নাতি হারিয়েছেন জয়নব। সেই দিনের ভয়াবহতা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন তিনি

‘মোর মাইয়্যা গোলেনুর ও দুই নাতি সিডরে মইর‌্যা গ্যাছে। এহোনো মুই মাইয়্যা নাতির কতা ভুলতে পারি নাই। ক্যামনে মোর ধারে গোনে মাইয়্যা নাতি পানতে লইয়্যা গ্যাছে। হে কতা মুই মোনো হরতে পারি না।’ এমন কথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে দেন তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধা জয়নব বিবি। তিনি আরও বলেন, ‘মোরে ক্যান আল্লায় বাচাইয়্যা রাখছে মুই বুড়া মানু মইর‌্যা গ্যালে কিছুই অইতো না। তিনি তার মেয়ে ও দুই নাতির জন্য এখনো পাগল প্রায়। সারাক্ষণ নদীর পানে চেয়ে থাকে বৃদ্ধা জয়নব বিবি। এখনো মেয়ে ও দুই নাতির জন্য কান্না থামেনি তার। তাদের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন বৃদ্ধা জয়নব।’ জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে ল ভ  হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। সিডরে উপকূলীয় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় ২৯৭ জনের প্রাণহানি এবং ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। সিডরের আজ ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। সুপার সাইক্লোন সিডরের ক্ষত চিহ্ন আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। তারই একজন তালতলী উপজেলার জয়ালভাঙ্গা গ্রামের  ৮০ বছরের বৃদ্ধা জয়নব বিবি। মুহূর্তের মধ্যেই তার মেঝ মেয়ে গোলেনুর ও দুই নাতি জাহিদ ও নাতনি রাবেয়াকে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে সাগরের পানির তোরে হারিয়ে যায়। দুই দিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

মানবেতর জীবন তাঁত শিল্পীদের : সুপার সাইক্লোন সিডরে সর্বস্ব হারিয়েছেন বেতাগী উপজলার বিবিচিনির তাঁত পল্লীর শিল্পীরা। এরপর ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি তারা। সহায়-সম্বল খুইয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন তারা। বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ সংলগ্ন কারিকর পাড়া। ছয় শতাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই এলাকায় তাঁত শিল্পের গোড়াপত্তন ২০০ বছর আগে। স্থানীয় প্রবীণরা জানান, এক সময় এখানকার ৬৫টি পরিবারই তাঁত বুনতো।

সিডরের আগেও কয়েকটি পরিবার তাঁতের কাজে নিয়োজিত ছিল। প্রথমে সিডর ও পরবর্তীতে আইলা তাদের সব শেষ করে দিয়েছে। তাঁত শিল্পী নুর মোহাম্মদ (৭৫) জানান, ১৪ বছর আগে সিডরের পর ঘর সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁত শিল্পে কোনো ধরনের সহযোগিতা না মেলায় যারা কাজ করতে আগ্রহী তারাও এ পেশায় আসতে পারছেন না। তাঁতি সুফিয়া বেগম (৫৫) অভিযোগ করেন, একপ্রকার বাধ্য হয়ে এ পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। তাঁতি পরিবারের নতুন প্রজন্ম বেল্লাল কারিকর (৩০) জানান, বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে তারা নারাজ। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারও তারা তাঁত শিল্পে ফিরতে চান। কাপড় ব্যবসায়ী আবদুল খালেক জানান, আগে এখানে উৎপাদিত পণ্যর প্রচুর কদর ছিল। বিবিচিনি ইউপি চেয়ারম্যান নওয়াব হোসেন নয়ন বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে এখানকার তাঁতিরা পেশায় ফিরতে পারছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুহৃদ সালেহীন জানান, আয়বর্ধক কমসূচি গ্রহণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর