সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
৬০ বছরেও হয়নি ড্রেজিং

দখল দূষণে কাপ্তাই হ্রদ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

দখল দূষণে কাপ্তাই হ্রদ

দখল ও দূষণের কবলে কাপ্তাই হ্রদ। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি। ১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে খড়স্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় এ হ্রদ। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটিতে অবস্থিত এ হ্রদ।  রাঙামাটি জেলার অহঙ্কার কাপ্তাই হ্রদ। এ হ্রদের আয়তন ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ ব্যবহার্য্য, পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ নানা সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে। এতকিছু সম্ভবনার পরও দীর্ঘ ৬০ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করার উদ্যোগ নেয়নি কেউ। তাই কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে হ্রদের নাব্যতা। পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে হ্রদের তলদেশ। ফলে হ্রদের গভীরতা হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর যেমন রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং হয়নি, তেমনি হ্রদের সীমানাও নির্ধারণ করা হয়নি। তাই কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে দখল দূষণের মহোৎসবে মেতেছে কেউ কেউ। হ্রদের পাড় দখল করে গড়ে উঠছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। নির্মাণ  করা হয়েছে বহুতল ভবনও। এসব অবৈধ স্থাপনার মধ্যে বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। হ্রদ ঘেঁষে পাহাড়ের পাদদেশে এবং ভাসমান টিলায় আশেপাশে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার বসতি। তাই নৌ-পরিবহন, বিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদনসহ হ্রদের অস্থিত্ব রক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা।  শুধু তাই নয়, বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি এবং হাজার হাজার টন বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা  হ্রদের আশপাশে গড়ে তুলেছে স’মিল, মিলিং মিল, ফিলিং স্টেশন, জেটিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, হোটেল, বাসাবাড়ি, রেস্তোঁরা। এসব স্থাপনার অসংখ্য বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে। ফলে মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। তবে কাপ্তাই হ্রদের সীমানা নির্ধারণ করা গেলে অবৈধ স্থাপনা সহজে উচ্ছ্বেদ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন রাঙামাটি পৌরসভা মেয়র মো. আকবর হোসেন চৌধূরী। তিনি জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হ্রদ ঘেঁষে উভয় তীরে অনেকটা বেপরোয়াভাবে গড়ে উঠছে বিভিন্ন বসতি। এসব কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে হ্রদটি। কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তবে সংশ্লিষ্টদের নজরদাড়ি থাকলে নতুন করে কোনো স্থাপনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যাবে। এদিকে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে জুড়ে অবৈধ স্থাপনাগুলোর বর্জ্য নিক্ষেপ, মল-মূত্র ত্যাগসহ নানা কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি ও পরিবেশের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটছে বলে দাবি  পরিবেশবাদী মোহাম্মদ আলী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর