মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বারোমাসি আমের বাগান ঘিরে স্বপ্ন

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বারোমাসি আমের বাগান ঘিরে স্বপ্ন

বারোমাসি আমবাগান ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁর কৃষক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নওগাঁর মহাদেবপুরে বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন আজিজুল হক। আর সেই স্বপ্নকে তিনি বাস্তবে রূপান্তর করতেই রাত দিন কাজ করছেন। গড়ে তুলেছেন বাহারি আম বাগান। বাগানের প্রতিটি গাছে গাছে আমের সমারোহ। নতুন জাতের এই আমের ভারে অনেকটা নুইয়ে পড়েছে গাছ। মাত্র ১০ মাস বয়সেই এসেছে ফল। এরই মাঝে তিনি দুই দফা আম বিক্রি করেছেন। আজিজুল জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমের বাগান করার জন্য স্বপ্ন দেখতেন। সেই ভাবনা থেকেই শখের বসে তৈরি করেছেন আমের বাগান। বাড়ির পাশে প্রসাদপুর মাঠে আড়াই বিঘা জমিতে ৫১৪টি আমের চারা রোপণ করেন। জমি প্রস্তুত করা, চারা লাগানো ও জমির চারপাশে বেড়া দেওয়াসহ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা। পরবর্তীতে মানুষ ও গরু-ছাগল থেকে ফসল রক্ষা করতে জিআই তারের বেড়া দেওয়ায় অতিরিক্ত আরও ৫০ হাজার টাকা বেশি গুণতে হয়েছে।

তিনি জানান, পাশের গ্রামের এক নার্সারি মালিক চুয়াডাঙ্গা থেকে মাতৃগাছ নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ১১০ টাকা পিচ চারা সংগ্রহ করেন। ১০ মাস বয়সে প্রতিটি গাছে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ১০টা পর্যন্ত আম ধরেছে। গত বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আমের গুটি একটু কম এসেছিল। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি গাছে ওষুধ স্প্রে করছেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে বাগান করে প্রথমবার ১০ মাস বয়সে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিছু আম বিক্রি করেছেন। ৪০ কেজি আম বিক্রি করেছি। প্রতি মন আমের মূল্য ১২ হাজার টাকা। ১৫-২০ দিন পরে আরও প্রায় ২০ কেজি আম বিক্রি হবে হলে আশা করছেন। দুই বছরের মধ্যে আম বাগানের সম্পূর্ণ খরচ উঠে আসবে। ২ বছর পরে তেমন কোনো খরচ হবে না। একটি আম গাছ ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিবে। প্রতিটি গাছেই কম বেশি আম ধরছে। অনেক গাছে নতুন করে মুকুল আসছে। কোনো কোনো গাছে আবার মুকুল থেকে আমের গুটিও দেখা দিয়েছে। সেই আম আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। এখন আজিজুল হকের চোখে সফলতার রঙিন স্বপ্ন। সাধারণত অষ্ট্রেলিয়া ভারতসহ বেশ কিছু দেশে বারোমাসি আমের চাষ হলেও বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। জানা যায়, আলহাজ আজিজুল হকের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার ইশ্বরলক্ষীপুর গ্রামে। গ্রামের পাশের ছোট একটি বাজার নাম পাঁঠাকাটা বাজার। সেই বাজারেই গড়ে তুলেছেন তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, রড, সিমেন্ট, লোহা ও টিনের দোকান। ব্যবসা ভালোই চলত কিন্তু কোনো কিছুতে ব্যবসায় তার মন বসত না। দোকান ছেলের হাতে দিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগান করেন। বাগান করার পর ১০ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে সফলতা তার হাতে এসে ধরা দিয়েছে। তিনি এখন একজন সফল বারোমাসি আম চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। লেখাপড়া শেষ করে গতানুগতিকভাবে ধান-চালের ব্যবসা করেছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ধান-চালের ব্যবসা থেকে খুব বেশি মুনাফা আসত না। কয়েক বছরেই বুঝতে পারেন, তিনি দিন বদলের যে স্বপ্ন দেখছেন তা ধান চালের ব্যবসা করে পূরণ হবে না। তবে কৃষি কাজ দিয়েই নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবেন-এমন বিশ্বাস ছিল তার। এক পর্যায়ে ধান চালের ব্যবসা বাদ দিয়ে ফুল ও সবজির চাষ শুরু করেন। ফুল ও সবজি চাষে কাক্সিক্ষত মুনাফা পেয়েছিলেন। এতে তার মনে আত্মতৃপ্তি আসে না। এরপর রড, সিমেন্ট, লোহা ও টিনের দোকান করেন। তাতে তার মন ভরে না। আজিজুল এরপর শুরু করেন বারোমাসি আম চাষ। এখন তিনি সফল। তার  রঙিন স্বপ্ন বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে। এখন তিনি আম বাগান বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন। আগামীতে ১০ বিঘা জমিতে আম বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। আজিজুলের মতে, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা স্বপ্ন নয়, যে স্বপ্ন মানুষকে ঘুমাতে দেয় না। সে তাই প্রকৃত স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকেই তিনি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, সারা বছর আম পাওয়া যাবে। আমি কখনো কল্পনা করিনি। আমি আজিজুল হকের বারোমাসি কার্টিমন আম বাগান দেখে খুশি হয়েছি। এখন আমিও মনে মনে ভাবছি বারোমাসি আমের বাগান করব। শিক্ষিত যুবক শহীদ বলেন, আজিজুল হকের বারোমাসি কার্টিমন আমের বাগানের মাধ্যমে আমরা ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু আম খেতে পারছি। আমিও তা দেখে বারোমাসি আমের বাগান করতে চাচ্ছি। তার বারোমাসি আম চাষে আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি। চারা নিয়ে আমিও চাষ শুরু করব ভাবছি। চারার জন্য অর্ডার দিয়েছি। মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে কিভাবে ফল নির্ভর করা যায় সেই পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্নভাবে ফলমূল চাষ করে ভাতের ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে। আমের ভরা মৌসুমে চাষিরা দাম পান না। কারণ এ সময় আম এক সঙ্গে বাজারে ওঠে। কৃষি বিভাগ থেকে নতুন জাত বারোমাসি কার্টিমন সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর