বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রাথমিক বিদ্যালয়শূন্য ৯১ গ্রাম

হালুয়াঘাট উপজেলার অধিকাংশ শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত

হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

সরকার ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কার্যক্রমের লক্ষ্য গ্রহণ করলেও ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ৯১টি গ্রামে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে বাধ্য হয়ে এসব গ্রামের কোমলমতি শিশুদের দূর-দূরান্তে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। আবার কিছু কিছু গ্রাম থেকে নিকটবর্তী বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার হওয়ায় ছোট ছোট শিশুরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্কুলে যেতে পারে না। ফলে প্রতিবছর স্কুলগমন উপযোগী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।   উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যে জানা যায়, উপজেলার পৌরশহরসহ ১২টি ইউনিয়নের ২৬৮টি গ্রামের মধ্যে ১৬৫টি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশাপাশি ৩৮টি বেসরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার হার ৫৭%।  এর মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়নি পৌরশহরের ১টি, ভুবনকুড়া ইউনিয়নে ১১টি, জুগলী ইউনিয়নে ৩টি. কৈচাপুর ইউনিয়নে ৫টি, সদর ইউনিয়নে ৩টি, গাজীরভিটা ইউনিয়নে ১৫ টি, বিলডোরা ইউনিয়নে ৭টি, শাকুয়াই ইউনিয়নে ১৮টি, নড়াইল ইউনিয়নে ৩টি, ধারা ইউনিয়নে ৭টি, ধুরাইল ইউনিয়নে ৫টি, আমতৈল ইউনিয়নে, ৭টি স্বদেশী ইউনিয়নে ১টিসহ মোট ৯১ গ্রামে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (পরিকল্পনা শাখা-১) কর্তৃক বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৫০০ সরকারি বিদ্যালয় নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে। বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পে শর্ত অনুযায়ী দানকৃত জমির পরিমাণ ন্যূনতম ৩০ শতক হবে, দানকৃত জমিটি অখ  এবং বিদ্যালয় স্থাপনের উপযোগী হতে হবে। বিদ্যালয় গমনে উপযোগী রাস্তা থাকতে হবে, দানকৃত জমি সচিব, প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে হবেসহ যে গ্রামে জনসংখ্যা দুই হাজারেরও  বেশি, দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বিদ্যালয় নেই, ওইসব গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।  পাশাপাশি এ বছরের গত ১৫ মার্চ সিনিয়র সচিব মো. নূরন্নবী কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (পরিকল্পনা শাখা-১) বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক নতুন প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় চি?হ্নিত সম্পর্কিত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। ওই পরিপত্রের আলোকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়বিহীন গ্রামের তালিকা তৈরি করে। বিদ্যালয় শূন্য উপজেলার ধারা ইউনিয়নের কয়রাহাটি গ্রামের  মোখলেছুর রহমান জানান, এই এলাকায় একটি কলেজ পাঠদান সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত হলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৪ সালের দিকে গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বেসকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে একটি বিদ্যালয়। সেখানেও রয়েছে দৈন্যদশা। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে নানা  পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।

 আমতৈল ইউনিয়নের  ধোপাগুছিনা ও নশ্বাইপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয় কওমী মাদরাসায় ঝুঁকে পড়ছে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীরা। তবে দুই এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হলেও জাতীয়করণের আশায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। নতুন বিদ্যালয় স্থাপন প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার সূত্রধর জানান, উপজেলায় বিদ্যালয়শূন্য গ্রামের তালিকা প্রস্তুত শেষে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে নতুন বিদ্যালয় স্থাপনে ম্যাপ পেয়েছি। উপজেলার ৩-৪টি স্থানে বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.  রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনে কাজ শুরু করার বিষয়টি চলমান রয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের স্থাপনের লক্ষ্যে শিক্ষা কমিটি যাচাই-বাছাই করে যাচ্ছে। নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে শিগগিরই তালিকা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর