মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নড়িয়ায় শিকলে বাঁধা রিতা আক্তার

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের রিতা আক্তার (২৫) নয় বছর ধরে শিকলবন্দী। চিকিৎসার অভাবে সুস্থ না হাওয়ায় মুক্ত হতে পারছেন না রিতা। সরেজমিন দেখা গেছে, ঘরের পাশে একটি বাঁশের মাচায় থাকছেন রিতা। সারাদিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। রিতা এখন মানসিক রোগী। তিনি একা একা কথা বলতে থাকেন। মাচানের পাশেই একটি গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় তাকে। বাড়ির লোকজন এবং পাড়া- প্রতিবেশীরা বলছেন লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলেন রিতা, স্থানীয় কার্তিকপুর স্কুল থেকে এসএসসির জন্য টেস্ট পরীক্ষাও দিয়েছিলেন রিতা।

তবে কীভাবে কী কারণে এ রকম হলো বুঝে উঠতে পারিনি আমরা। তবে তার বাবা- মা বলছেন জ্বর হয়েছিল। এরপর থেকেই ও এ রকম হয়ে গেছে। জানিয়েছেন চিকিৎসা করাতে পারেনি রিতার পরিবারটির আর্থিক অবস্থা দুর্বল বলে। যতটুকু সাধ্য ছিল তা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এখন রিতার পরিবারটি সর্বস্বান্ত। নড়িয়ার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ডিঙ্গামানিক গ্রামের পিতা আলাউদ্দিন দেওয়ান (৬৫) এবং মাতা মেহের বানুর (৫৫) পাঁচ মেয়ের মধ্যে রিতা আক্তার (২৫) চতুর্থ। সংসারে একমাত্র ছেলে আলাউদ্দিন দেওয়ান বেকার। জানা গেছে, রিতার বাবা বয়স বাড়ার কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। অভাব-অনটনের সংসারে একমাত্র ভাইও বেকার। এদিকে তাকে খাওয়ানো এবং দেখাশোনা করেন তার বয়স্ক মা মেহের বানু। ঠিকমতো তিনবেলা খাবার জোগাতেই কষ্ট তাদের, চিকিৎসা করাবেন কীভাবে- এমনটাই কথা তাদের। ৯ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে, পরিবারের লোকজন জানান, টাকার অভাবে চিকিৎসার না হওয়ায় মানসিক ভারসাম্য আরও অবনতি হয়েছে রিতার, যার কারণে ৯ বছর ধরে শিকলে বাঁধা রয়েছে তার স্বপ্নগুলো। যে বয়সে তার স্বামী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে একটি সাজানো  গোছানো সংসার থাকার কথা, সেখানে ভাগ্য তাকে শিকলবন্দী করে রেখেছে। তবে উন্নত চিকিৎসা ও সহযোগিতা পেলে রিতা আক্তার (২৫) আবারও সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাদের ঘরবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, সহায়-সম্পত্তি যা আছে এতে একটি ভাঙা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় কাটছে রিতা আক্তারের শিকলে বাঁধা বন্দীজীবন। তার স্বজনরা জানান, আমরা গরিব, দিন এনে দিন খাই, অতিরিক্ত কোনো ভালো কিছু খাবার এনে ওকে কোনোদিন খাওয়াতে পারি না। এতে স্থানীয় মেম্বারও কিছু দেয় না। ওর খাওয়া-দাওয়ায় তো কম লাগে না, অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতাও নেই বলে জানায় তার পরিবার। এ বিষয়ে রিতার চাচা মো. সোহরাব দেওয়ান (৪৫) বলেন, ওরা অনেক অসহায়, টাকার অভাবে অনেক কিছুই করা যায় না, ভালো চিকিৎসা দিতে পারলে হয়তো সে ভালো হয়ে যেত। এ ছাড়াও বলেন, ওর খাওয়া, জামাকাপড় এ গুলোতেও কম খরচ লাগে না, তাই সমাজের বিত্তবানরা যদি ওর জন্য কিছু করতেন তাহলে হয়তো ওর কষ্ট থাকত না।

সর্বশেষ খবর