শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইটভাটায় জ্বলছে আমগাছ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ইটভাটায় জ্বলছে আমগাছ

অবৈধ ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে আমবাগান। ফলে নিঃস্ব হওয়ার পথে কয়েক হাজার কৃষক। ইটভাটার মালিকদের কেউ কেউ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আম ব্যবসায়ীদের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইটভাটা পরিচালনা করে যাচ্ছেন  বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কয়েক মালিক। এ উপজেলায় রয়েছে চারটি ইটভাটা। এদিকে পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন কৃষি জমিতে অবৈধ সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা স্থাপনের ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকায় আমবাগান চাষিসহ ২ হাজারের বেশি কৃষক। ইটভাটার কারণে ধ্বংসের পথে খোদ সরকারি দুটি বড় আমবাগান। প্রতি বছর ওই বাগান দুটি থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব আদায় হলেও ইটভাটার কারণে আমের ফলন না হওয়ায় পুরো রাজস্ব আয় বন্ধ। জানা যায়, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের আলোকছিপি, বিশ্রামপুর, রায়পুর ও ছোট পলাশবাড়ীতে মিরাজ-১ ও মিরাজ-২ ইটভাটা প্রতিষ্ঠা করেন অনুমোদন ছাড়াই। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চলতি বছর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। পরে গত ১০ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক  মেজ-বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে পরিবেশ অধিদফতরকে অবহিত করার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। একই মাসের ১৬ মার্চ রংপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলমের স্বাক্ষরিত আরেক পত্রে বলা হয়, বিভাগীয় কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ইটভাটার পার্শ্বে  দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। উল্লেখ করে নিয়মানুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা হয়নি মর্মে শিগগিরি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়। তবে পরিবেশন অধিদফতরের দেওয়া এসব পত্রের তোয়াক্কা করেনি ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন। নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে করোনাকালেও ইটভাটায় পুড়িয়েছেন ইট। চলতি বছরও পুরোদমে চলছে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। ভাটার চারপাশে স্তূপ করা হয়েছে কয়েকশত মণ কাঠের খড়ি।

ওই ইট ভাটায় ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে আবাদি ফসল। প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমবাগানের মালিক। এছাড়া ইটভাটার কারণে ৪ একর জমির আমবাগানের গাছ কেটে ফেলেছেন এক আমবাগান মালিক। কৃষক ও আমবাগান চাষিরা জানান, জেলা প্রশাসন, পরিবেশন অধিদফতরসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার না পেয়ে আমগাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাগানগুলো কেটে ফেলা হলে বাগানের কাজে নিয়োজিত এ উপজেলার প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার কর্মবঞ্চিত হবে বলেও জানান তারা।  আলোকছিপি গ্রামের সমির উদ্দীন জানান, ছুয়ালাক আম খিলাবার তানে এরা আমের বাগান লাইগ্নু, দানেশের ভাটারা সব শেষ করে দিজে। এলা আমও ধরে না, ছুয়ালা খাবাও পারে না। এই তানে রাগ করে গাছলা কাটে ফিলাচু। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব সরকার বলেন, আমার কাছে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে গেছে। ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই জানার পর তা ফেরত চেয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসার সুবোদ চন্দ্র রায় বলেন, ইটভাটার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, ধোঁয়ার কারণে আমের পাতা খাদ্যগ্রহণ ক্ষমতা হারায়। আম ছোট আকারসহ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার  যোবায়ের হোসেন জানান, যদি পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই কোনো ইটভাটা চলে পরিবেশ অধিদফতর চাইলে আইনগত ব্যবস্থা  নিতে পারবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর