রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতায় ১০ হাজার একর জমি

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

জলাবদ্ধতায় ১০ হাজার একর জমি

চন্দনা, রামপুর, মনপাল ও তপইয়া গ্রামের মাঠ। এ মাঠে এক সময় আমন ফসল হতো। ফসল তুলতে ঘরে ঘরে হতো নবান্ন উৎসব। ইঁদুরের কাটা ধান গর্ত থেকে তুলত শিশু-কিশোররা। গৃহস্থের সন্তান সেই ধান বিক্রি করে গ্রামের ওয়াজ-মাহফিল, ওরশ বা গ্রামীণ মেলা থেকে মুড়ির মোয়া, বাতাসা বা আঙ্গুলি কিনতেন। দরিদ্র কিশোররা পরিবারের খাবার জোগান দিতেন। আমন ফসলের চাল দিয়ে খেজুরের পায়েস, ধোঁয়াওড়া ভাপা পিঠা, ম্যারা পিঠা, জামাই পিঠা বানানো হতো। এখন দক্ষিণ কুমিল্লায় সেগুলো গাল-গল্পে পরিণত হয়েছে। কথাগুলো বলেন, লাকসামের মনপাল ফুলকলি বিদ্যানিকেতনের সভাপতি লতিফুর রহমান। ওই মাঠটির মতো খাল দখলের কারণে দক্ষিণ কুমিল্লার ১০ সহস্রাধিক একর ধানি জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে হারিয়ে গেছে আমন ফসল। বিঘœ ঘটছে বোরো ধান চাষে। দেখা গেছে, বোরো ধান লাগানোর এখন সময় হলেও জমির পানি সরছে না। বিশেষ করে দক্ষিণ লাকসাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় এ সমস্যা প্রকট হয়েয়েছে। কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ ভাগ খাল দখল হয়ে গেছে। কোথাও খাল দখল করে মাছের ঘের, বাড়ি ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় খাল ভরাট করে জমির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাকসামের উত্তরদা ইউনিয়নের নলুয়ার খাল বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। এতে তার দুই পাশের ঠেঙ্গারপাড়, রামপুর, চন্দনা, মনপাল, তপৈয়া, রাজাপুর, খিলা গ্রামের কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন। সহস্রাধিক একর জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। এ খালটির তপৈয়ার দিকে সংযোগ খাল বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। মনপাল দিঘির উত্তরপাড়ের খাল পুরো দখল হয়ে গেছে। দক্ষিণ দিকের খালও দখল হয়ে গেছে। মনপাল গ্রামের কৃষক সহিদ  জানান, ‘অনেকে খাল ভরাট করায় জমির পানি সরছে না। আমন ফসল হয় না, এখন বোরো লাগানোর সময়ও পানি সরছে না।’ উত্তরদা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিপন চন্দ্র বলেন, ‘নুলুয়ার খাল ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কৃষ্ণপুর থেকে তপৈয়ার দিকের সংযোগ খালও বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণে খাল মরে যাচ্ছে। হারাখাল-পৌলাইয়ার যে খালটি ভূঁইয়াবাড়ির পাশ দিয়ে বেরুলা খালে পড়েছে, সেটিও বন্ধ হয় যাচ্ছে। এতে এ এলাকার জমিগুলোর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’

লাকসাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘লাকসামের দক্ষিণ এলাকায় ভালো আমন ফসল হতো। জলাবদ্ধতার কারণে ধান উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ বিএডিসি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষিণ কুমিল্লার বিভিন্ন খাল পরিদর্শন করেছি। বিভিন্ন স্থানে খাল ভরাট হয়ে গেছে। নলুয়ার খালটি খননের বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব।

সর্বশেষ খবর