সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবৈধ ইটভাটায় নির্ভয়ে গাছ পোড়ানো চলছে

আকবর হোসেন সোহাগ, নোয়াখালী

অবৈধ ইটভাটায় নির্ভয়ে গাছ পোড়ানো চলছে

নোয়াখালীতে অবৈধ ইটভাটা বেড়েই চলছে। জনবসতি এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ ইটভাটার বেশির ভাগই জ্বালানি ব্যবহার করছে গাছ। তাদের ইট তৈরির কাঁচামাল হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এসব ইটভাটা জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে অথচ দেখার যেন কেউ নেই। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। কিছু জরিমানা করা হয় বটে। কিন্তু ইটভাটা বন্ধ করা হয় না। অনুমোদনহীন ইটভাটা আবার পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি সাধনের জন্য পরিবেশ অধিদফতরের নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণ দিয়ে বছরের পর বছর অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী নোয়াখালীতে মোট ১০২টি ইটভাটা। এর মধ্যে বাংলা ভাটা রয়েছে ২০টি। স্কুল-কলেজ, জনবসতি, বাজারসংলগ্ন হওয়ায় এবং লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকাসহ মোট অবৈধ ইটভাটা ৪৫টি। বেশির ভাগ বাংলা ভাটায় জ্বালানি হিসেবে গাছ পোড়ানো হয়। ঝিকঝাক ভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো না হলেও আশপাশে রয়েছে ফসলি জমি, হাট-বাজার, জনবসতি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব ইটভাটা জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে। বেশিরভাগ ভাটায় ইট তৈরির কাজে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে একদিকে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে বর্ষায় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ইটভাটার মাটি ও ইট নিয়ে পাওয়ার টিলার চলাচলের কারণে ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ সড়কগুলো। কবিরহাট উপজেলার দয়ারামদি গ্রামে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কবিরহাট-বসুরহাট সড়কের পাশে একতা ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচারিং নামে একটি ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর। এদের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। তবু চলছে। কারণ এরা পরিবেশ অধিদফতরের বলে দেওয়া ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। এ ছাড়া হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের তানভীর হায়দারের মালিকানাধীন ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচারার, পূর্ব সোনাদিয়া, বাংলা বাজার এলাকায় নাছিম ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচারার ও একই উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের এস ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচারার দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বাংলা ড্রাম চিমনির সাহায্যে ইটভাটা চালু রেখেছে।

সেনবাগ উপজেলার ইয়ারপুর গ্রামে সোনালি ব্রিকস্ ফিল্ড, একই উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের ভাই ভাই ম্যানুফ্যাকচারার ছাড়পত্র নবায়নবিহীন এবং ছাতারপাইয়া এলাকায় অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ইট তৈরি করছে। পরিবেশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এভাবে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা কার্যক্রম।

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, সরকার যখন ইটভাটা বন্ধ করে বিকল্প ভাবছে, ঠিক তখন নোয়াখালীতে ফসলি জমি, জনবহুল এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘেঁষেই গড়ে উঠছে ইটভাটা। এর মধ্যে নিষিদ্ধ চিমনিও ব্যবহার হচ্ছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় গাছপালা ও জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে অনেকের। বালি ও ধোঁয়ার সঙ্গে ছাই উড়ে শারীরিক সমস্যায় পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও ভাটাসংলগ্ন বাসিন্দারা।

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ইটভাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন তারা। প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী তারা সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল আলম জানান, অবৈধ এবং ছাড়পত্র নবায়নহীন ইটভাটায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময় জরিমানার পাশাপাশি কিছু কিছু ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

সর্বশেষ খবর