সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

মিলের বর্জ্যে ফসল নষ্ট অনাবাদি ৫০০ একর

পাবনা প্রতিনিধি

মিলের বর্জ্যে ফসল নষ্ট অনাবাদি ৫০০ একর

পাবনায় অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্যে কয়েক শ একর জমির ফসল নষ্টের অভিযোগ উঠেছে একটি পেপার মিলের বিরুদ্ধে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করেই কারখানা চালু করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতায় অনাবাদি হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদী উপজেলার ১০ গ্রামের ফসলি জমি। দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যরে সংস্পর্শে মরছে পুকুরের মাছ, ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালে পাবনার মুলাডুলির সরাইকান্দি গ্রামের বিএডিসি পানাসি (পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ) সেচ প্রকল্পের আওতাধীন কৃষি জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয় একটি পেপার মিল। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর অভিযোগ, কৃষি জমিতে শিল্প নির্মাণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল বন্ধ করে কারখানা গড়ে তোলে মিল কর্তৃপক্ষ। উৎপাদন শুরুর পর রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত বর্জ্য ও অপরিশোধিত পানি চাষিদের জমিতে ফেলায় নষ্ট হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এলাকায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ছে নানা চর্মরোগও।  সরেজমিন ভদ্রার বিল এলাকায়  দেখা যায়, জলাবদ্ধতা ও কারখানার দূষিত বর্জ্যরে কারণে বিলের বুকজুড়ে এখন কচুরিপানার রাজত্ব। গ্রামবাসীরা জানান, এক সময় কিষান-কৃষানির কর্মচাঞ্চল্যতায় দিনভর মুখরিত হয়ে থাকত মুলাডুলির ভদ্রার বিল। শত শত একর জমিজুড়ে ফলত সোনার ফসল। এ ফসল দিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারও কৃষক পরিবার। সেই বিল এখন নীরব নিস্তব্ধ। তিন বছর ধরে এ বিলের কৃষি জমির ফসলের ওপর নির্ভরশীলদের জীবন নিদারুণ অর্থকষ্ট ও হতাশায় ভরে গেছে। সরাইকান্দি গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, এখানে পেপার মিল নির্মাণের স্থান দিয়েই ভদ্রার বিলের পানি বের হয়ে যাওয়ার প্রধান নালা ছিল। ২০১৭ সাল থেকে পেপার মিল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর এই নালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিলের পানি বের হওয়ার আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় বিলের শত শত একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এই বিলের জমিতে বছরে দুটি ফসলের আবাদ করা যেত। জলাবদ্ধতার কারণে এখানে তিন বছর ধরে কোনো আবাদ হয় না।

দাশুড়িয়া এলাকার আফজাল হোসেন জানান,  পেপার মিল ছাড়াও আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে উঠেছে। জলাবদ্ধতার কারণে এখানকার কৃষকরা বাধ্য হয়েই শিল্পকারখানার মালিকদের কাছে স্বল্পমূল্য জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। মুলাডুলি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আবদুল আজিজ জানান, ভদ্রার বিল থেকে পানি নিষ্কাশন ক্যানেল হয়ে নদীতে গিয়ে মিশত। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য দুটি মৌসুমে গ্রামের চাষিরা বছরে দুটি ফসল পেতেন। কিন্তু এই স্থানে পেপার মিলসহ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে পানি নির্গমনের পথ বন্ধের কারণে সৃষ্ট স্থায়ী জলাবদ্ধতায় গত তিন বছর ধরে অনাবাদি হয়ে পড়েছে উপজেলার সরাইকান্দি, লক্ষ্মীকোলা, চাঁদপুর, দরগাপাড়া, কারিগরপাড়া, দেবীপুর, বহরপুর, রামচন্দ্রপুর গ্রামের প্রায় ৫০০ একর কৃষিজমি। রাসায়নিক মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি পুকুরে মেশায় মারা যাচ্ছে মাছও। তিনি আরও জানান, কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার চেয়ে উল্টো মিলেছে ভয়-ভীতি ও হুমকি। বারংবার তারা আমাদের কথার তোয়াক্কাই করছে না। তবে নীতিমালা মেনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে উৎপাদন চলছে জানালেও সংবাদকর্মীদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। মুঠোফোনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জহিরুল হকের সঙ্গে। তিনি দাবি করেন পেপার মিলে জার্মান প্রযুক্তির ইটিপি ব্যবহার হচ্ছে। মেশিন অ্যাডজাস্ট করতে কিছুটা অসুবিধা হওয়ায় পানি অন্যের জমিতে গিয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে কৃষি জমি নষ্ট করে শিল্পায়নের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ। তিনি বলেন, কৃষিপ্রধান এলাকায় ফসলি জমিতে কীভাবে এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। সাধারণ কৃষকদের ক্ষতি করে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এ ব্যপ্যারে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর