মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ধান-চালের দামে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

ধান-চালের দামে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করেই দাম কমতে শুরু করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে প্রতিবস্তা চালে (৯৫ কেজি) ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম না কমলেও প্রতি মণ ধানে কমেছে ৫০-৬০ টাকা। আমনের নতুন ধান-চাল সরবরাহ বাড়তে থাকায় বাজার হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। ধান-চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চাতালে উঠলেই চালে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে লোকসান দিয়ে কতদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। এনিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন তারা। আর কৃষকরা জানান, নানা প্রতিকূলতায় চলতি মৌসুমের আমন ধানের ফলন কম হলেও আশানুরূপ দাম পাওয়ায় তাদের চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছিল। তবে প্রতিদিনই ধানের দাম কমছে। স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতি মণে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

 এরপরও ধার-দেনা পরিশোধ, বিভিন্ন রবি ফসল চাষ ও সংসারের অন্যান্য খরচ মেটাতে কমদামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সরেজমিনে দেখা যায় শেরপুর উপজেলায় ২০০ থেকে ৩০০ মণ ধান ধরে এ রকম ২৫০-৩০০টি এবং ৫০-৬০ মণ হারে ধান শুকানো যায় এ রকম ১২৫০-১৩০০টি চাতাল রয়েছে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে শতাধিক সেমি অটো রাইস মিল। চাল ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী জানান, প্রতিটি বড় চাতালের বিপরীতে ১৪ জন ও ছোট চাতালে চারজন করে শ্রমিক কাজ করেন। তারা জানান, সম্প্রতি ভরা আমন মৌসুমে ধান-চালের দাম কমতির দিকে থাকার কারণে ব্যাপারিরাও চাল কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর স্থানীয়ভাবেও তেমন একটা ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান আমদানি করতে হয়। এ ছাড়া একটি চাতাল নিয়মিত চালু রাখতে ৫-৬ চাতাল ধান মজুদের প্রয়োজনও রয়েছে। কিন্তু মোকামে চাহিদামতো ধান মিললেও চালের বাজার কমতির দিকে থাকায় লোকসানের সর্বোচ্চ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ব্যয়ও আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে। ফলে এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা বন্ধের পাশাপাশি পথে বসার উপক্রম হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এসব ব্যবসায়ীরা। সাধুবাড়ী যুমনা সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, শেরপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫ জাতের ধান ১০১০-১০৩০ টাকা, রণজিৎ ১০৫০-১০৮০ টাকা ও বিআর-৪৯ জাতের ধান ১১২০-১১৫০ টাকা, কাটারিভোগ ১২০০-১৩২০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিমণ ধান উক্ত পরিমাণ টাকা দরে ক্রয় করে ঘরে আনতে আরও ২৫-৩০ টাকা খরচ পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয়। এই ধান সিদ্ধ ও শুকানো বাবদ প্রতিমণে ব্যয় হয় ২০-২২ টাকা। আর ভাঙাতে আর ২২ টাকা খরচ পড়ে। অপরদিকে ওই পরিমাণ (এক মণ) ধান থেকে বড়জোর ২৮-২৯ সের চাল পাওয়া সম্ভব। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই পরিমাণ চাল বাজারে বিক্রি করলে একেকজন ব্যবসায়ীর প্রতিবস্তায় ১৫০-২০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। জানতে চাইলে শেরপুর চাউলকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ জানান, ধানের দাম তুলনামূলক না কমলেও চালের দাম কমছেই। তাই বাজার অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তবে কী কারণে ভরা আমন মৌসুমে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিকভাবে বলতে না পারলেও চালের আড়তদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম কমাচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর