শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

শুঁটকি পল্লীতে করোনার থাবা

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুঁটকি পল্লীতে করোনার থাবা

ক্রেতা সংকটে শুঁটকির বড় অংশ অবিক্রীত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র মুখ থুবড়ে পড়েছিল তখন আশা জাগিয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শুঁটকি পল্লী। জেলায় করোনার মধ্যেই ২০০ কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়। প্রথমদিকে বিক্রিও হয়েছে ভালো। বর্তমানে ক্রেতা সংকটে উৎপাদিত শুঁটকির বড় একটি অংশ অবিক্রীত রয়ে গেছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের চোখে-মুখে এখন হতাশার ছাপ।

শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, প্রতি মৌসুমেই মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার শুঁটকি উৎপাদন করে তারা। গত মৌসুমের বিপুল পরিমাণ শুঁটকি অবিক্রীত থাকায় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই চলতি মৌসুমে আবার উৎপাদন শুরু করেছে তারা। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মৎস্য অধিদফতর অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় করোনার মধ্যে ৪ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। জেলাজুড়ে ১৯৩টি শুঁটকির মাচা রয়েছে। এর মধ্যে আশুগঞ্জ উপজেলায় ১৬০, নাসিরনগরে ২২টি ও সদর উপজেলায় ১১টি। এসব মাচায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত আট হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ। জানা যায়, মেঘনা নদীর তীরঘেঁষা দেশের অন্যতম লালপুরের শুঁটকি পল্লীতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ দিনভর কাজ করছেন। প্রতিটি মাচায় ৭-১০ জন শ্রমিক প্রক্রিয়াজাত করছেন বিভিন্ন প্রকার শুঁটকি। প্রতিদিন তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় ১৪০ টাকা করে। শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রথমে কাঁচা মাছ সংগ্রহ করে।

মাচার ওপর সূর্যের তাপে শুকানো হয়। কিছু মাছের শুঁটকি প্রক্রিয়া শেষে মাটির তৈরি মটকাতে রাখা হচ্ছে। আবার কেউ শুঁটকি উৎপাদন কাজে ব্যবহারের জন্য নতুন মাচা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুঁটকি পল্লীগুলোতে পুঁটি, শৈল, গজার, বাইম, বুজুরি, টেংরা, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ শুকানো হয়। প্রতি কেজি শুঁটকি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে প্রকারভেদে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এখানকার শুঁটকির রয়েছে আলাদা বৈচিত্র্য। যার কদর আছে দেশ-বিদেশে। তবে এবার করোনার কারণে চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা আসতে না পারায় উৎপাদিত শুঁটকির প্রায় ২০ ভাগ অবিক্রীত রয়ে গেছে। এ অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় চলতি মৌসুমের উৎপাদিত শুঁটকির বিপণন নিয়েও তাদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। জেলা মৎস্য সম্পদ কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, উৎপাদিত শুঁটকি কেনাবেচার সুবিধার্তে অনলাইন ভিত্তিক মার্কেট তৈরির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাংক ঋণের বিষয়ে সহযোগিতা করা হবে।

সর্বশেষ খবর