শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি বিপাকে চাষিরা

নাটোর প্রতিনিধি

দেশে মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ রসুন উৎপাদিত হয় নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলায়। জেলা থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার রসুন বিক্রয় হয় প্রতি মৌসুমে। কিন্তু রসুন উৎপাদনের সম্ভাবনাময় এই জেলায় এবার সারের অতিরিক্ত দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। অভিযোগ আছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ডিলাররা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০০-৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে টিএসপি, এমওপি এবং ইউরিয়া। রসুনসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে অত্যাবশ্যকীয় এই তিন সারের অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিভাগের কোনো মনিটরিং নেই। কৃষকদের স্বার্থে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সারের বাজার তদারকি করলেও কাজ হচ্ছে না। বিএডিসি ও বিসিআইসি অনুমোদিত নাটোর জেলার প্রতিটি সারের দোকানে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ভর্তুকিমূল্যে ইউরিয়া সার প্রতিবস্তা ৮০০, টিএসপি ১১০০, এমপিও ৭৫০ টাকা ও ডিএপির বিক্রয়মূল্য ৮০০ টাকা। দাম নিয়ন্ত্রণে এই তালিকা কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ চাষিদের। তাদের দাবি, তারা প্রতিবস্তা ইউরিয়া ৯০০-১০০০, টিএসপি ১৫০০-১৭০০০, এমপিও ৮৫০-৯০০ ও ডিএপি ১১০০-১২০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা সারের জন্য কোনো ভাউচার দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। ভাউচার চাইলে সার বিক্রিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন তারা। এ ছাড়া টিএসপি সার ক্রয়ে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন অন্য সার ক্রয়ের। চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ার বিল তাজপুরের চাষি আরিফুল ইসলাম বলেন, দুই দফা বন্যায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এবার আগাম বীজতলা তৈরির পরিকল্পনা করি। এখন দেখি সারের দাম আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কৃষকের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। বড়াইগ্রামের মামুদপুর গ্রামের আবু রায়হান বলেন, বছরের এই সময় রসুন চাষের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু সার কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন পারভীন বলেন, আমরা ডিলারদের নিয়ে সভা করে তাদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রির নির্দেশ দিয়েছি। কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, সারের কোনো সংকট নেই নাটোরে। কৃষক অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতীয় কৃষক সমিতি নাটোর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম বলেন, মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় সারের ডিলারদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে কৃষকরা। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সম্প্রতি অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তিনি দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা করেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি প্রতি সপ্তাহে সারের বাজার মনিটরিং করছেন। জেলা প্রশাসক শাহরিয়াজ বলেন, অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে।

সর্বশেষ খবর