বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির মাটি

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

ইটভাটায় যাচ্ছে কৃষি জমির মাটি

ঢাকার উপকণ্ঠের ধামরাইয়ে দেদার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ১০-১২ বছরের জন্য উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব আবাদি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন। স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে দেদার ভেকু মেশিন দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে। পরে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সরজমিন দেখা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। গত নভেম্বর মাস থেকে এসব ভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। এতে প্রতিটি ভাটায় প্রয়োজন মাটি। আর এ সুযোগেই ধামরাইয়ের সূত্রাপুর, রোয়াইল, ভালুম, পথহারা, দেপাশাই, গাড়াইল, বালিথা-বাথুলি, বেলিশ্বর, জালসা, সুতিপাড়া, কাওয়াখোলা, কুল্লা, বড়নারায়ণপুর, ধাইরা, জয়পুরা, ফুকুটিয়া, ভাড়ারিয়া, বাইশাকান্দা, জালসা, জলসীন, নান্নার, সুয়াপুরসহ অর্ধশতাধিক স্থানে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। আর জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে জমির উর্বরা শক্তি কমতে শুরু করলেও এ কথাগুলো স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের জানানো হচ্ছে না। ধামরাইয়ের সূত্রাপুর এলাকায় দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রায় ১০-১৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পাশের জমির মালিকদের ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তারা স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। বাধা দিতে গেলে মাটি ব্যবসায়ীরা উল্টো বিভিন্ন হুমকি দেন। ব্যবসায়ী       শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে রোয়াইল এলাকার মাটি ব্যবসায়ী আবদুল খালেক ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ধামরাইয়ে শত শত ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে।

আগে তাদের বন্ধ করতে বলেন। তারপর আমি বন্ধ করব। গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় পাশের জমির ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক জানান, কৃষক তার ফসলি জমির টপ সয়েল ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি করা। তিনি বলেন, ধামরাইয়ে এখন চলমান প্রায় আড়াইশ ইটভাটা রয়েছে। আর এসব ভাটার ইট তৈরি করার জন্য ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটিই সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করেই ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। কৃষক আবুল হোসেন জানান, বেশি টাকা পাওয়ার কারণে তার দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে ওই জমিতে আগের মতো আর ফসল হবে কিনা তা তিনি জানেন না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফ হাসান জানান, সরকারি নিয়ম মেনে কেউ ইটভাটা তৈরি করতে পারবে না। তাই অনিয়মের মধ্যেই ধামরাইয়ে অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তারা কেটে নিচ্ছে। আর এ টপ সয়েল বিক্রি বন্ধ করার জন্য কৃষকদের বললেও তারা শুনছেন না।

সর্বশেষ খবর