বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জমি নেই, ঘরও নেই আশ্রয় খুপরিতে

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

মোর কোনো জমিও নেই। ঘরও নেই। থাকার মতো কোনো স্থান নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো মতে অন্যের জমিতে পলিথিন দিয়ে খুপরি ঘর বানিয়ে থাকি। রাতে ঘুমাতে পারি না। এখন শীত ঢোকে ঘরের ভিতরে। ঝড় হলে এ ঘরে থাকতে পারি না। উলোটপালট করে দিয়ে যায় সব। তহন মোগো আশ্রায় নিতে হয় কোনো সাইক্লোন সেন্টারে। এ রকম নানামুখী সমস্যা নিয়ে চোখের জ্বল ফেলে কথাগুলো বললেন মদারীপুরের উপজেলার গোপালপুর এলাকার পুয়ালী গ্রামের অসহায় বৃদ্ধা সালেহা বেগম (৬০)। তিনি আরও বলেন, মোর স্বামী রহমান হাওলাদার বয়সের ভারে চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। সে কোনো কাজকর্মও করতে পারে না। মোর চারটি মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। স্বামীর যা ছিল সব বিক্রি করে বহু কষ্টে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। এখন তারা যে যার মতো করে স্বামীর সঙ্গে আছে। ছোট মেয়ে সাথী পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে কিন্তু অর্থের অভাবে তারে আর পড়াতে পারছি না।

অনেক সময় না খেয়ে থেকে দিন চলে যায়। একদিকে খেতেও পারি না। অন্যদিকে মাথার গোঁজার ঠাঁইও নেই। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শীত সবই মোর আর মোর পরিবারে মাথার ওপর দিয়া যায়। হের পরও মোর ভাগ্যে আজ পর্যন্ত একখানা ঘর জুটল না। মুই এহন পরিবার লইয়া কই যাইমু। শেখের বিটি হাসিনা যদি দয়া করে মোরে একখান ঘর দিত তাহলে মোদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বৃদ্ধ সালেহা বেগমের স্বামীর একমাত্র সম্বল দুই চালা টিনের বসত ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যায়। এতে করে সালেহা পরিবার নিয়ে থাকার জন্য কোনো স্থান ছিল না। এরপর থেকে সালেহা বেগমকে পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ গোপালপুর গ্রামের রহিম কাজী অস্থায়ীভাবে তার পরিত্যক্ত ভিটায় থাকার জন্য জায়গা দেন। পরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কিছু টিন ও পলিথিন সংগ্রহ করে সেখানে সালেহা বেগম ছোট একটি এক চালা খুপরি ঘর বানিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। এরপর সালেহা বেগম এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনের কাছে বছরের পর বছর ধর্না দিয়েও একটি ঘর তার কপালে জোটেনি। বর্তমানে তিনি তার পরিবার নিয়ে একটি ঘরের অভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, এই দুনিয়াতে কার খবর কেডা রাহে একখান ঘরের জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে অনেকবার গিয়েও আজ পর্যন্ত পাইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার শেষ দাবি তিনি একখান ঘর মোরে দিলে পরিবার নিয়ে সুখে থাকতে পারতাম। আর তা না হলে কবরে গিয়েও শান্তি পামুনা। গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর বলেন, ভুলক্রমে তার নামটা ঘরের তালিকায় যায়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বৃদ্ধা সালেহার নাম তালিকায় উঠে না থাকলেও তাকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর