মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নড়াইলে ‘একঘরে’ করার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলে তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ-জীবন যাপন করছে একটি পরিবার। ঘটনাটি সদর উপজেলার সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের। সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ ও তার লোকজন শালিস বৈঠক করে ওই গ্রামের ইকরাম শেখের পরিবারকে প্রায় তিন মাস ধরে ‘একঘরে’ রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু একঘরে নয়, ইকরাম শেখের ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আশিককে (১৫) ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে পেয়ে কুপিয়ে জখম করে চেয়ারম্যানের লোকজন। আশিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাত-পা-মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করা হয়। আশিক সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। ইকরাম শেখের ছেলে তরিকুল বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে (গায়ে থুথু লাগা) কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের ভাগ্নে রাশেদের সঙ্গে আমার ছোট ভাই আশিকের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাশেদ আশিকের গায়ে সিগারেটের আগুন দেয়।

এ ঘটনার জেরে প্রায় তিন মাস আগে খলিশাখালী স্কুল মাঠে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে শালিস বৈঠকে আমাদের “একঘরে” করা হয়। আমাদের কাছে কেউ কিছু বিক্রি করে না। এমনকি ওষুধপথ্যও না। কয়েক দিন আগে স্থানীয় এক দোকানে আমার অসুস্থ ছেলের জন্য ওষুধ কিনতে গেলেও তা দেয়নি। প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হাটবাজার করতে হচ্ছে। ভয়ে এলাকার কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। কেউ যদি কথা বলতে চায় তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ আহত আশিকের বাবা কৃষক ইকরাম শেখ বলেন, ‘চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখের অপকর্মের বিরুদ্ধে ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। আমরা বড় অসহায়-জীবন যাপন করছি। আমি, আমার স্ত্রী ও তিন ছেলে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ছেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’ এদিকে গতকাল বিকালে ভুক্তভোগী ইকরাম শেখের বাড়ি গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরাও ভয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে মোবাইল ফোনে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানা গেছে। এ ব্যাপারে সিঙ্গাশোলপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল শেখ বলেন, ‘আশিক উচ্ছৃঙ্খল ছেলে। উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে তিন মাস আগে তার পরিবারকে গ্রাম্য শালিসে একঘরে করা হয়।’ শালিসে কাউকে এভাবে একঘরে করার নিয়ম আছে কিনা- জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারিভাবে এর বৈধতা রয়েছে।’ এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, কাউকে একঘরে বা সমাজচ্যুত করার অধিকার কারও নেই। বিষয়টির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আশিককে মারধরের ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর