বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

খসে পড়ছে নাটোরে উত্তরা গণভবনের স্থাপত্যশৈলী

নাটোর প্রতিনিধি

খসে পড়ছে নাটোরে উত্তরা গণভবনের স্থাপত্যশৈলী

খসে পড়ছে নাটোরের উত্তরা গণভবনের স্থাপত্যশৈলীর কারুকার্য। নষ্ট হচ্ছে উত্তরা গণভবন তথা দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির সৌন্দর্য ও নান্দনিকতা। মুঘল ও পাশ্চাত্যরীতির মিশ্রণে তৈরি ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করা উত্তরা গণভবনের কারুকার্য রক্ষার জন্য ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছে নাটোর গণপূর্ত বিভাগ। জানা যায়, ১৭৩৪ সালে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি তথা উত্তরা গণভবন প্রাসাদের মূল অংশ ও কিছু ভবন নির্মাণ করেন রাজা দয়ারাম রায়। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন এক ভূমিক¤ন্ডেপ রাজপ্রাসাদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে রাজা প্রমোদনাথ রায় দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আর দেশি রাজমিস্ত্রিদের হায়তায় মুঘল ও পাশ্চাত্যরীতির মিশ্রণে মোট ১২টি ভবন নির্মাণ করেন। ওই যুগে এসব ভবন এবং কারুকার্যে ব্যবহার করা হয় চুন, সুরকি। তবে এসব স্থাপত্যশৈলীর স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তা খসে পড়ছে। এতে করে নষ্ট হচ্ছে উত্তরা গণভবনের মূল প্যালেস, কুমার প্যালেস ও সংগ্রহশালা। নাটোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির নাম পরিবর্তন করে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে গণপূর্ত বিভাগ ভবনগুলোর দেখাশোনা করে আসছে। একাধিকবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও হয় উত্তরা গণভবনে। বর্তমানে এটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। গণপূর্ত বিভাগ জানায়, উত্তরা গণভবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে নান্দনিকতা ফেরাতে প্রতি বছর চুন আর রঙের কাজ করেন তারা। তবে এবার রং করতে গিয়ে কারুকার্য এবং নকশা খসে পড়তে দেখেন শ্রমিকরা। মূল প্যালেস, কুমার প্যালেস ও সংগ্রহশালা ভবনের প্রতিটি কারুকার্যের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে খসে পড়ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে ভবনগুলোর মূল কাঠামো। উত্তরা গণভবনের দায়িত্বে থাকা সহকারী ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার বলেন, যথাযথ সংস্কারের অভাবে ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের প্রাচীন ভবনগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনের বেশির ভাগ কারুকার্য খসে পড়ছে। শ্রমিকরা রং করতে গিয়ে হাত দিলে তা ঝরে পড়ছে। কোনোভাবেই নকশাগুলো রক্ষা করা যাচ্ছে না। অতিদ্রুত ভবন সংস্কারের পাশাপাশি নকশাগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন। নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, উত্তরা গণভবনের স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ ও নকশাগুলো অক্ষুণœ রেখে কীভাবে সংস্কার কাজ করা যায়, তার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্থাপত্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। এরপর বাকি সংস্কার কাজ করব। তিনি আরও বলেন, উত্তরা গণভবনের ভবনগুলোর স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন হওয়ার কারণে কারুকার্যগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে স্থাপত্যশৈলীগুলো ভেঙে পড়ছে। এই স্থাপত্যগুলো রক্ষা করা খুবই জরুরি। স্থাপত্য বিভাগের বিশেষজ্ঞদের অপেক্ষায় রয়েছি। তারা পরিদর্শনের পরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত নিয়ে সংস্কার করা হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক ড. এ কে এম আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রাচীন স্থাপত্য একটা জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করে। আর উত্তরা গণভবন নাটোরবাসীর এক গর্বের জায়গা। এ ইতিহাস এবং স্থাপত্যশৈলী নষ্ট হলে গণভবনের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি নাটোর হারাবে তার ইতিহাস-ঐতিহ্য। এ জন্য চারুকলা ভাষায় উত্তরা গণভবনের স্থাপত্যশৈলীর সব নকশা বা কারুকার্যের ছবি তুলে হুবহু ফরমা তৈরি করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এছাড়া মোল্ট বানিয়ে এসব কারুকার্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দেশের সব নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দিয়ে পরিদর্শন করিয়ে গণভবনের স্থাপত্যশৈলীগুলো রক্ষা করতে হবে। একবার কারুকার্যগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে, সেগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কারুকার্যগুলো রক্ষা করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর