শিরোনাম
শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

৬ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাব গায়েব!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

৬ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাব গায়েব!

সরকারি নির্দেশনায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে (রাকাব) কৃষকরা খুলেছিলেন ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব। কেউ কেউ লেনদেনও করেন সেটিতে। তবে সম্প্রতি আনলাইন ব্যাংকিং করতে গিয়ে ৬ লাখ কৃষকের ব্যাংক হিসাবের কোনো খোঁজ মিলছে না। ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের দাবি, ব্যাংকিং কার্যক্রমকে অনলাইনে নিতে গিয়ে সফটওয়্যার জটিলতায় এ বিপত্তি ঘটেছে। তবে আইসিটি বিভাগ বলেছে, হিসাবের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনের ভুলের কারণে এটি ঘটেছে। কোনো হিসাব মুছে যায়নি। প্রতি তিন মাস পর পর ব্যাংক হিসাবের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন জমা দেয় রাকাব। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ৬ লাখ ২৯ হাজার ২৮৯টি হিসাব কম। জুনে ছিল ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪১৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে সেপ্টেম্বরে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা আগের ত্রৈমাসিকের ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমে ৯৬ লাখ ৯৮ হাজার ১৫২টিতে নেমে আসে। গত জুনে যা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রাকাবকে বাদ দিয়ে হিসাব করলে ওই তিন মাসে হিসাবের সংখ্যা শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়ে। অবশ্য খুঁজে না পাওয়া হিসাবগুলোতে তেমন টাকা ছিল না। তাই এতোগুলো হিসাব কমলেও তা আমানতে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি, বরং মোট আমানত ১১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪০৪ কোটি টাকা। রাজশাহীর সরদহ শাখার ম্যানেজার নুরুন নবী আনোয়ার বলেন, ‘যে হিসাবগুলোতে জিরো ব্যালেন্স আছে, সেগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ডাটা মাইগ্রেশন করতে গিয়ে যেগুলোতে জিরো ব্যালেন্স হয়ে আছে সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে এগুলো আবার নতুন করে করতে হবে। আমাদের এখানে কারেন্ট হিসাব ১৫০টির মতো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ টাকার হিসাব খুব কম ছিল।’ রাকাবের সোনামসজিদ শাখার তাসবির বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে আনেকগুলো ডরমেন্ট হয়ে আছে। এগুলোকে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা বলে। গ্রাহক আবেদন করলেই এগুলো আবার ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের এখানে কৃষকের হিসাব ছিল ১ হাজার ৩০০ এর মতো। এর মধ্যে ১০০টি হিসাব চালু আছে। বাকিগুলো ডরমেন্ট হয়ে আছে। গ্রাহকরা আবেদন করলে এগুলো আমরা ঠিক করে দেব।’ তবে হিসাব হারানোর বিষটি মানতে নারাজ আইসিটি ডিজিএম আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘এটি আমার শাখা ‘নিয়ন্ত্রণ বিভাগ’ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের হিসাব স্টেটমেন্ট দেওয়ার সময় ভুল হয়েছিল। ব্যাংকের হিসাব হারিয়ে যাওয়ার নয়। এগুলো সবই ঠিকঠাক আছে। এগুলো থেকে সবাই টাকা তুলতে পারবেন।’ ১০ টাকার হিসাব এর মধ্যে শুধু কৃষক হিসাব নয়, ভাতা, কিশোর, ভর্তুকি, মুক্তিযোদ্ধার হিসাবও আছে। এর মধ্যে কৃষকদের ভর্তুকির জন্য একটি আলাদা রিপোর্ট দিতে হয়। এটি আলাদা করতে গিয়ে সংখ্যাগত ভুল হয়েছিল। হিসাবের কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের কৃষি প্রণোদনার বিষয়টি একটি সিস্টেম দিয়ে চলে। এখানে সমাজসেবা থেকে তালিকা দেওয়া হয়। সেগুলো ম্যানুয়্যালি লেজারে করে দেওয়া হয়। তাদের প্রণোদনার টাকা সেখানে যায়। সংশ্লিষ্ট শাখা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে রাকাবের ৩৮৩টি শাখা পুরোপুরি অনলাইনে আনা হয়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাকাবের কাছে খোয়া যাওয়া হিসাবগুলোর তথ্য ব্যাকআপ আছে কিনা, তা খোঁজ নিতে হবে। ১০ টাকার হিসাব হলেও অনেক হিসাবে এর চেয়ে বেশি টাকা থাকতে পারে। গ্রাহকরা চাইলে তা যেন ফেরত দেওয়া যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর