শুক্রবার, ১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ধনীরাই পেলেন দুর্যোগসহনীয় সরকারি ঘর

ধামরাই প্রতিনিধি

ধনীরাই পেলেন দুর্যোগসহনীয় সরকারি ঘর

ঢাকার উপকণ্ঠের ধামরাইয়ে দুর্যোগসহনীয় সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে ধনীদের। যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য তাদের দেওয়া হয়নি এসব ঘর। স্থানীয় এলাকাবাসী সরকারি এসব ঘর বিতরণের অভিযোগ তুলছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত টিআর, কাবিটা কর্মসূচির বিশেষ খাতের অর্থ দ্বারা গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে যাদের সামান্য জমি আছে কিন্তু টেকসই গৃহ নেই। গৃহহীন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে গৃহহীন পরিবার, বিধবা, প্রতিবন্ধীব্যক্তি ও পরিবারে উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন পরিবার অথবা অসহায় বৃদ্ধ/বৃদ্ধার অনুকূলে অগ্রাধিকারমূলে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ঢাকার ধামরাই উপজেলায় ১৮টি ঘর বরাদ্দ দেন সরকার। এ ঘর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

 ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে দুইজন স্বচ্ছল ব্যক্তি পেয়েছেন এমন দুটি ঘর। চৌহাট ইউনিয়নে একই অবস্থা। ভাড়ারিয়ায় ঘর পেয়েছেন মিয়াপাড়ার মঙ্গল আলীর ছেলে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরিরত  মনোয়ার হোসেন মনু। আরেকটি পেয়েছেন তার খালাতো বোন একই ইউনিয়নের রুপবতী গ্রামের  সৌদি প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জুলিয়া বেগম। জানা গেছে, মনোয়ার হোসেন মনুর সাড়ে চারশতাংশ জমির বসতবাড়িটি ইটের প্রাচীর ঘেরা। এর মধ্যে রয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট বারান্দাসহ একটি আধাপাকা টিনসেড ঘর ও একটি চৌচালা বড় আকারের টিনের ঘর। এরপরও সেখানে তাকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সরকারের প্রায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দের একটি দুর্যোগ সহনীয় পাকা বাসগৃহ। তিনি সরকারের ডিজাইন পরিবর্তন করে টয়লেট ও রান্না ঘরে টিনের পরিবর্তে ছাদ দিয়েছেন। বসতবাড়ি ছাড়াও নিজের নামে রয়েছে জমি। এসময় তার স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, আমাদের এখানে ঘর ভাড়ার চাহিদা রয়েছে। সরকারের করে দেওয়া বিল্ডিং প্রয়োজনে ভাড়া দেওয়া হবে। মনোয়ার হোসেন মনু বলেন, সরকার আমাকে বিল্ডিং ঘর দিয়েছে। আমি যদি পাওয়ার যোগ্য না হই তাহলে সরকার বিল্ডিং ভেঙে নিয়ে যাক। আমার কোনো আপত্তি নাই। অপর দিকে  মনোয়ার হোসেন মনুর খালাতো বোন জুলিয়া বেগমের ঘর নিয়ে কথা হয় তার মা কুলসুম বেগম ও সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে জনি মোল্লার সঙ্গে। তারা জানান, জুলিয়া ১২ হাজার টাকা বেতনে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম সৌদি প্রবাসী। মনুর মাধ্যমেই জুলিয়া ঘরটি পেয়েছেন। জুলিয়ার কাছ থেকে মনু টাকাও নিয়েছেন। কিন্তু কত টাকা নিয়েছেন তা কুলসুম বেগম বলেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের টুকরো কাঠ জোড়া দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করে দিয়েছে। টিনও কম পড়েছে। সেটাও আমাদের কিনতে বলেছে। এখন আবার আমাদের কাছে ২০ বস্তা সিমেন্ট চেয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের অনেকের থাকার ঘর নেই। তাদের ভাগ্যে জুটছে না এসব ঘর। অথচ মনোয়ার হোসেনের মনুর বাড়িতে দুটি ঘর থাকার পরও কিভাবে সরকারি ঘরটি পেল কিছুই বুঝতেছিনা। স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন, বন বিভাগের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে মনু ঘরটি পেয়েছেন।  মনু ও জুলিয়ার চেয়ে গরিব লোকও আছে এ ইউনিয়নে।  এ বিষয়ে স্থানীয় ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, কার মাধ্যমে কাকে দুর্যোগ সহনীয় ঘর দেওয়া হয়েছে আমি কিছুই জানি না। তবে শুনেছি মনু ও জুলিয়া ঘর পেয়েছে। জানতে চাইলে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান বলেন, দুর্যোগ সহনীয় ঘর বিতরণের তথ্য আমার কাছে নেই। ইউএনও স্যারের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সামিউল হক জানান, ঘর বরাদ্দে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর